আগুনঝরা পলাশে রঙিন অরণ্য

আগুনঝরা পলাশে রঙিন অরণ্য

বসন্ত মানেই চারপাশে কচি সবুজ পাতা আর বাহারি রঙিন ফুলের সমারোহ। আর ফুল মানেই রঙের মিলন মেলা। তাই তো ফাগুনের শুরুতেই প্রকৃতি পেয়েছে বসন্তের ছোঁয়া। শীতের জরাজীর্ণ শুকনো পাতার মড়মড় শব্দকে পেছনে ফেলে সবাই সাদরে বরণ করেছে ঋতুরাজ বসন্তকে। আর প্রকৃতিতে আগুন ঝরা পলাশ ফুল জানান দিচ্ছে বসন্তের উপস্থিতি। এই সময় পলাশ ফুলের সৌন্দর্য দূর থেকে আগুনের মতো জ্বলতে দেখা যায়। রক্তঝরা ফুলের মেলায় পাখিদের কলতানে মুখরিত চারিদিক। বসন্ত এলেই সবার হৃদয় মাঝে দোলা দেয় এই পলাশ ফুল। এ যেন বসন্তে পলাশের রাজত্ব।

পলাশের রক্তরাঙা আভা কবি সাহিত্যিকদের মনেও দোলা দিয়ে যায়। তাই তো কবিরা পলাশের রূপ বর্ণনা দিয়েছেন নানাভাবে, কেউ কবিতায় আবার কেউবা গানের সুরে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-

‘কুঞ্জবনের অঞ্জলি যে ছড়িয়ে পড়ে,

পলাশ কানন ধৈর্য হারায় রঙের ঝড়ে,

বেণুর শাখা তালে মাতাল পাতার নাচে।’

বাংলার গ্রাম ও শহরে প্রায় সব জায়গায় কম-বেশি পলাশ ফুল দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামে পলাশ গাছের নিচে শিশুরা ফুল দিয়ে খেলা করে থাকে। একে অপরের কানে ফুল গুজে দেয়। গ্রামবাংলার এই দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।

পলাশ ফুলের আরেক নাম 'অরণ্যের অগ্নিশিখা'। পলাশ ফুলের রঙ হলুদ, লাল ও লালচে কমলা- এই তিন রকম হয়। পলাশ গাছ তার ফুলের জন্যই সবচেয়ে বেশি পরিচিত লাভ করেছে।

পলাশ ফুল বসন্ত ঋতুতে অর্থাৎ ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে দেখতে পাওয়া যায়। এটি মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষ। গাছটি সর্বোচ্চ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। থোকায় থোকায় ফুল ফোটে। পলাশ ফুল দুই থেকে চার সে. মি. লম্বা হয়। কুঁড়িগুলো দেখতে অনেকটা বাঘের নখের মতো। শাখা-প্রশাখাগুলো আঁকাবাঁকা। পলাশের নেশা তীব্র। এই ফুল সবার মনে একবার হলেও দোলা দিয়েছে। এই ফুলের প্রেমের জালে জড়ায়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

তবে পলাশের সৌরভ বা সুভাস থাকে মাত্র ২০-২৫ দিন। এর সৌন্দর্য পরখ করতে করতেই উধাও হয়ে যায়। তবে এই ক্ষণস্থায়ী সুখ চলে গেলেও স্মৃতি থেকে যায় পুরো বছর ধরে। এই সুখস্মৃতি নিয়ে আমরা অপেক্ষায় থাকি অন্য বসন্তের।