দুদকের মামলায় ড. ইউনূসের জামিন

দুদকের মামলায় ড. ইউনূসের জামিন

শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জামিন দিয়েছেন আদালত।

রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আস-সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।

ড. ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন জামিন আবেদনের শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

এর আগে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। গত ১লা ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আছাদুজ্জামানের আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এর আগে একই আদালত ৩রা মার্চ মামলাটির শুনানির তারিখ ধার্য করেন।

গত ২৯শে জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়। চার্জশিটভুক্ত ১৪ আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে পারভীন মাহমুদ জামিনে রয়েছেন। বাকি ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করে তদন্ত কর্মকর্তা। এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশের মধ্যে অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র এক কোটি টাকা।

বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত লঙ্ঘন করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে আত্মসাৎ করেছেন। একই সঙ্গে অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তারা। যা দণ্ডবিধি এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অবস্থায় আসামি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় কমিশন থেকে চার্জশিট দিতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

গত ৩০শে মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। সংস্থার উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এ বিষয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কর্মীরা লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা চেয়ে আদালতে গেলে তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়। সেই সমঝোতার ভিত্তিতে আইনজীবীদের খরচ বাবদ কর্মীরা ওই ২৫ কোটি টাকা অগ্রিম চেয়েছিলেন। সেটিই দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কর্মীদের লিখিত সম্মতি আছে। তিনি আরও বলেন, কর্মীরা ব্যাংক হিসাব খুলতে দেরি করায় চুক্তিতে সেই জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছিল। পরে দুই পক্ষ সেখানে ব্যাংক হিসাব নম্বর বসায়। সেটি সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে।

লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা টাকা চেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ কর্মী শতাধিক মামলা করেছিলেন। তারা হাইকোর্টেও আবেদন করেছিল। পরে তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়। সমঝোতার মাধ্যমে পাওনা পেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা ২০২২ সালে মে মাসে মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। পরে পাওনা পরিশোধের বিষয়টিকেই অর্থ আত্মসাৎ ধরে দুদক মামলা করে।