সিরাজগঞ্জে মেডিকেল কলেজে ক্লাসে শিক্ষার্থীকে ‘গুলি করলেন শিক্ষক’

সিরাজগঞ্জে মেডিকেল কলেজে ক্লাসে শিক্ষার্থীকে ‘গুলি করলেন শিক্ষক’

সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ক্লাসরুমের ভেতরে এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তৃতীয় বর্ষের ক্লাস চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত কলেজে উপস্থিত হয়ে একটি পিস্তল জব্দ করেছে। 

অভিযুক্ত শিক্ষক কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. রায়হান উদ্দিন। তিনি সিরাজগঞ্জ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। গুলিবিদ্ধ আরিফিন আমিন তমাল তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
এদিকে গুলিতে ছাত্র আহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করছেন। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কলেজে প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন।

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. রায়হান উদ্দিন প্রায়ই নিজের নামে লাইসেন্স করা পিস্তল নিয়ে ক্যাম্পাসে ও ক্লাসে আসেন। আজ তিনি ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অতিরিক্ত ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন। আগে থেকেই তিনি শ্রেণিকক্ষে বসে ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ক্লাসে অংশ নিতে আপত্তি জানান।

এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের বাগবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফিন আমিন তমালের ওপর ক্ষিপ্ত হন শিক্ষক রায়হান। একপর্যায়ে টেবিলে রাখা পিস্তল দিয়ে তমালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন তিনি। এ সময় গুলি তমালের পকেটের রাখা মোবাইলে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের ওপর চড়াও হন। এ সময়ে দৌড়ে শিক্ষক রায়হান পালিয়ে যান। পরে শিক্ষার্থীরা কলেজ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষককে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। 

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ডা. আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ওই শিক্ষকের মেজাজ উগ্র। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায়ই তিনি খারাপ আচরণ করেন। ক্লাস ও ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে আসায় শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন আগেও। আমি তার বদলির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশ কয়েকটি চিঠি দিয়েছি, কিন্তু লাভ হয়নি। আজ অতিরিক্ত ক্লাসে আসতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করায় বাগবিতণ্ডা হয়েছে। বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীকে গুলি করেন তিনি। এ ঘটনায় আমি সত্যিই হতবাক হয়েছি। আমি এখন অফিসের কাজে ঢাকায়। কলেজে ফিরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবারও অধিদপ্তরে চিঠি পাঠাব।’  

মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পর পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। এখন পরিস্থিতি ক্রমশ শান্ত হচ্ছে।’ 

সিভিল সার্জন ডা. দেবপ্রদ রায় বলেন,‘শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীকে গুলির ঘটনাটি শুনে লোক পাঠিয়েছি। এ ধরনের ঘটনায় আমরাও বিব্রত।’ 

সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের খবর দেওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’ 

পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা পিস্তলটি জব্দ করেছি। এটি বৈধ না অবৈধ, তাও যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ মুহূর্তে অভিযুক্ত শিক্ষককে কলেজে নিরাপদে রাখা হয়েছে। গ্রেপ্তার বা আটকের বিষয়ে পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. রায়হান উদ্দিনের মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।