একটি গোষ্ঠী মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহ করেছে, বিদেশে অর্থও পাচার করছে: সিপিডি

একটি গোষ্ঠী মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহ করেছে, বিদেশে অর্থও পাচার করছে: সিপিডি

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন যে সরকার বিদেশি ঋণে একের পর এক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তার সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না কেন। তার মতে, একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বৈদেশিক ঋণের মেগাপ্রকল্পকে পুঁজি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে, এমনকি বিদেশে অর্থও পাচার করছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা রাজস্ব বাজেট থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে একটি টাকাও দিতে পারছি না। বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা প্রতারণামূলক বাস্তবতার মধ্যে আছি। ঋণ নিয়ে এত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে এর প্রতিফলন নেই। এত কিছু করলাম কিন্তু মানুষ সুবিধা পেল না কেন?’

বৃহস্পতিবার সিপিডি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ এবং পরিশোধের সক্ষমতা: উদ্বেগের কারণ আছে কী?’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর এক হোটেলে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতারণামূলক বাস্তবতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ এখনো ২৩ শতাংশে কেন আটকে আছে? সরকারি হিসাবে, জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদন অনুসারে, মানুষের গড় আয়ু কমেছে, মৃত্যুহার বেড়েছে। আবার বেকারের সংখ্যাও বেড়েছে। ২৫ শতাংশ পরিবারকে ঋণ করে চলতে হয়। গত দেড় দশকে এত কিছু করলাম; তাহলে মানুষ এসবের সুফল পেল না কেন?

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো আরও বলেন, শিক্ষা খাতে এখনো জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ২ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে ১ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ বাড়াতে পারিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘উল্টো আমরা কী দেখলাম, ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের টাকা লুটতরাজ হয়েছে। বৈদেশিক ঋণের মেগা প্রকল্পকে একশ্রেণির স্বার্থানেষী গোষ্ঠীর পুঁজি সঞ্চয়ের নতুন উৎস হিসেবে উৎসাহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে তা বেশি হয়েছে। আমার বিশ্বাস মেগা প্রকল্পের সঙ্গে ওই বিশেষ গোষ্ঠীর টাকা পাচারের সংশ্লেষ পাওয়া যাবে।’

অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাসহ আফ্রিকার দেশগুলোর চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। কীভাবে আমরা ভবিষ্যতে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করব, কীভাবে আমরা রপ্তানির সক্ষমতা বাড়াব—তা নিয়ে বেশি চিন্তা করা উচিত। কারণ রপ্তানি বাড়লে তা ঋণ পরিশোধকে সহজ করবে। এখন রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা দরকার।

রেহমান সোবহান আরও বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একজন বিশেষ উপদেষ্টা আছে, যার একটি শক্তিশালী ব্যবসায় অভিজ্ঞতা আছে। তাকে দুর্নীতি এবং বিশেষ সুবিধাভোগীদের মোকাবিলা করতে হবে। সিপিডির চেয়ারম্যানের মতে, ঋণ করে প্রকল্প করলে ২০-৫০ শতাংশ খরচ বেড়ে যায়। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি এবং ব্যবস্থাপনা বড় ইস্যু হয়ে যায়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসা রাজস্ব দিয়ে উন্নয়ন খরচের জোগান দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ঋণ করে ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। কারণ, সরকার রাজস্ব বাজেটের যে হিসাব দেয়, তাতে শুধু সুদ বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে ঋণের আসল পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ থাকে না। এর মানে ঋণের বড় অংশ আমরা ঋণ করে পরিশোধ করছি।

সিপিডির সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।