ঈদযাত্রায় ভোগান্তি শুরু

রাজধানীতে প্রবেশ-বহির্গমন পয়েন্টে তীব্র যানজট

রাজধানীতে প্রবেশ-বহির্গমন পয়েন্টে তীব্র যানজট

রমজান শুরুর প্রথম দিন থেকেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে প্রচণ্ড যানজট। প্রতিটি কর্মদিবসে অফিস শেষে তা অসহনীয় আকার ধারণ করে। গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে যানজটের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। এদিকে, ঈদ উপলক্ষে অনেকে আগেভাগেই পরিবার-পরিজনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে আগাম ছুটি নিয়েও ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। সেই চাপ যুক্ত হয়েছে রাজধানীর বহির্গমন ও প্রবেশ পয়েন্টগুলোতে। ফলে রাজপথ ছাড়াও প্রবেশ ও বহির্গমন স্থানগুলোতে তীব্র জট দেখা দেয়। লঞ্চ, বাস ও ট্রেন স্টেশনগুলোর আশপাশেও দেখা গেছে ভয়াবহ যানজট।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, অফিস শেষের পর কাকরাইল মোড় থেকে হেয়ার রোড হয়ে মগবাজার ফ্লাইওভারের ওপর ও নিচে যানবাহনে ঠাসা। শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন রোড হয়ে মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে গিয়ে যানজটে গাড়ি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ভিআইপি এলাকার হেয়ার রোড, ইস্কাটন রোড, সাতরাস্তা থেকে সব পথের গাড়ি একসঙ্গে মগবাজার মোড়ে যুক্ত হলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মগবাজার থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কে গাড়ির চালকদের স্টিয়ারিং বন্ধ করে বসে থাকতে দেখা যায়। যানজট সামলাতে তখন বিজয় সরণির পূর্ব পয়েন্টের মোড়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা হয়।

মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়কের দু’পাশই ছিল যানজটে ঠাসা। কমলাপুর রেলস্টেশন ও আশপাশের এলাকায়ও দুপুরের পরপরই যানজটের মাত্রা বাড়তে দেখা যায়। যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকায়ও ছিল একই অবস্থা। বাবুবাজার বুড়িগঙ্গা সেতুতে উঠতে যানবাহনগুলোকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বাসের ভেতরে তীব্র গরম নারী-শিশু ও বয়স্ক মানুষকে বাড়তি যন্ত্রণায় ফেলে দেয়। অফিস শেষে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় প্রতিটি পয়েন্টে। একই পরিস্থিতি ছিল গাবতলী এলাকায়ও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেকে আগেভাগে ঢাকা ছাড়ছেন। কেউ আবার পরিবারের সদস্যদের আগে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, ঈদের আগের দিনগুলোতে ঘরে ফেরার ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে। এজন্য স্ত্রী-সন্তানদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আবার ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীরাও শেষ ধাপের মালপত্র কিনে ঢাকা ছাড়ছেন। সব মিলিয়ে গতকাল যানজট ছিল ভয়াবহ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান বলেন, রাজধানীসহ ঢাকার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলো স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা ট্রাফিক বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এজন্য পার্শ্ববর্তী সব পুলিশ ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে অন্তত ১ কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়বে। রাজধানী থেকে বাসের ট্রিপগুলো ঠিক সময়ে ছাড়তে পারলে শিডিউল বিপর্যয় এড়ানো যায়। শিডিউল বিপর্যয় হলেই রাস্তায় অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে। তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এসব অভিজ্ঞতা থেকেই যানজট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

যানজট নিরসন ও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক বিভাগের নেওয়া কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করতে গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান বলেন, ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। ঈদযাত্রায় ঢাকার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এজন্য পার্শ্ববর্তী সব পুলিশ ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সড়কে যাতে ফিটনেসবিহীন যানবাহন না চলতে পারে, সেজন্য গ্যারেজগুলোতে নজরদারি রাখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের শেষ মুহূর্তে একসঙ্গে ছুটি হয়। লাখো মানুষ একসঙ্গে বাড়িতে রওনা হয়। তখন কিছুটা ভোগান্তি দেখা যায়। অন্যান্য বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার ভোগান্তি নিরসনের ব্যবস্থা করা হবে।

ডিএমপি ট্রাফিক প্রধান জানান, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে সব সময় পদক্ষেপ থাকে। রেকার, ডাম্পিং গ্রাউন্ড ও জনবল রয়েছে। অনেক সময় ফিটনেস ভালো থাকলেও অযাচিত যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এমন আশঙ্কা থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের ব্যবস্থা থাকে। এ ছাড়াও দূরপাল্লার গণপরিবহনগুলো মহানগরীর মধ্যে যাত্রী ওঠানামার কাজ করবে না। গণপরিবহনগুলো নির্ধারিত সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবে না। বিশেষ করে ছাদে কোনো যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে যাবে না।