বিমানবন্দর সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবি

বিমানবন্দর সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবি

ঢাকা, ৩০ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়েছে রাস্তায় বিভিন্ন স্কুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী। তারা সড়ক হত্যায় জড়িত পরিবহনের মালিক, শ্রমিকদের কঠোর শাস্তি দাবি করছে। পাশাপাশি দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে হাসতে হাসতে প্রতিক্রিয়া জানানোয় নৌপরিহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

এদিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ায় বিমানবন্দর সড়কের উভয়পাশে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হয়। দুপুর ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

ক্যামন্টমেন্ট থানার ওসি কাজী শাহান হক গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষার্থীরা আজ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে তারা রাস্তার আশেপাশে অবস্থান নেয়। তবে আপাতত বিমানবন্দর সড়কের উভয়পাশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান ওসি।

রবিবার দুপুরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়।

নিহত একজনের নাম আবদুল করিম, সে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী দিয়া খানম ওরফে মীম। সে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। বাসচাপায় আহত হয় আরো ১৩ জন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের ভাষ্য, ঘটনাস্থলের পাশেই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। ঘটনার সময় ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলের পাশ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। অনেকে বাসের জন্য ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিল।

এ সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস এলে শিক্ষার্থীরা তাতে ওঠার চেষ্টা করে। ওই সময় জাবালে নূর পরিবহনের আরেকটি বাস বাম পাশ দিয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়।

খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষার্থীরা এসে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে এবং বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। পরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে রবিবার সচিবালয়ে মংলা বন্দরের জন্য মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে দুই শিক্ষার্থীর বাস চাপায় নিহত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এ সময় মন্ত্রী হাসতে হাসতে মন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘এটার সঙ্গে কি এটা রিলেটেড?’ তারপর বেশ কিছুক্ষণ হেসেই বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।

তখন সাংবাদিকরা বলেন, ‘চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় সড়কে নিয়মিত প্রাণ ঝরছে। আজও ঢাকার কুর্মিটোলায় একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে এদেরকে (চালক-হেলপার) আপনিই প্রশ্রয় দেন। আপনার প্রশ্রয়ে তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে’।

নৌমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, যে যতটুকু অপরাধ করবে সে সেভাবেই শাস্তি পাবে। এই শাস্তি নিয়ে বিরোধিতা করার কারও কোনো সুযোগ নেই।’
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির বিষয়ে যথাযথ বিচার হয় না বা হচ্ছে না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী আবারও হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩জন যাত্রী মারা গেলেন। সেখানে কেউ কি এরকম কথা বলে।’

এদিকে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নৌমন্ত্রী হাসতে হাসতে কথা বলায় সামাজিক মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ বিক্ষোভ করতে নেমে শিক্ষার্থীরাও সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ভূমিকার সমালোচনা করেন। তাদের অভিযোগ, নৌমন্ত্রীর প্রশ্রয় পেয়েই পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে সড়কে একের পর এক প্রাণ ঝরাচ্ছে। কিন্তু দোষীদের কারোরই বিচার হচ্ছে না।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৪২৪ঘ.)