সায়েন্সল্যাব-জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আহত শতাধিক

সায়েন্সল্যাব-জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আহত শতাধিক

ঢাকা, ৫ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, সিটি কলেজ থেকে ঝিগাতলা এলাকায় এবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শনিবার ছাত্রলীগ-যুবলীগের মারাত্মক হামলার প্রতিবাদে রবিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে জিগাতলা এলাকায় গেলে তাদের ওপর আবারো একই ধরনের হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সন্ত্রাসীদের হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও সন্ত্রাসীদের লাঠিসোঁটার আঘাতে আরো শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে আন্দোলনরতরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মী। এদিকে, এ ঘটনার তথ্য সংগ্রহের সময় দুর্বৃত্তদের হাতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও মারধরের শিকার হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে সপ্তম দিনের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বারডেমসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রবিবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন হঠাৎই তীব্র গতি পায়। শিক্ষার্থীরা শাহবাগ এলাকা থেকে বিক্ষোভ করতে করতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে জিগাতলা এলাকার দিকে রওনা দেয়। শনিবার জিগাতলা ও ধানমন্ডি এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় ওই এলাকায় আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে পিলখানা পার হয়ে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে ঘুরে চলে যেতে বলে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে শিক্ষার্থীদের একাংশ সেখান থেকে ঘুরে সায়েন্স ল্যাবরেটরির পথ ধরে। কিন্তু, অপর অংশ সেখানেই অবস্থান করার চেষ্টা করলে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে হঠাৎই ধানমন্ডি লেকের দিক থেকে একদল সন্ত্রাসী লাঠি সোঁটা, রামদা, কিরিচ ইত্যাদি নিয়ে এসে তাদের ওপর চড়াও হয়। এসময় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এর সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়ে। তাদের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী মারধরের শিকার ও অন্তত চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তারা আরো অভিযোগ করেন, হামলাকারীদের অনেকেই হেলমেট পরে এসে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানায়, দুষ্কৃতকারীদের হামলায় অন্তত চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। অন্তত তিনজনের মাথা ফেটে গেছে। এছাড়াও একজনের গাল ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কেটে গেছে। রক্তক্ষরণ ঠেকাতে ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক তাদের পপুলার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তার নাম মাহমুদুর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র। আহতদের মধ্যে একজন নারী শিক্ষার্থীও রয়েছেন।

এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় মহড়া দিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, পিলখানা-জিগাতলা এলাকায় বিজিবি প্রহরা দেওয়া শুরু করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

মারধরের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির উদ্দেশে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় এলে সেখানে হঠাৎ করেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় অনেক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে গেছে। অনেকের গাল-মুখ কেটে গেছে। অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

হামলাকারীদের চিনলেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাল (শনিবার) যারা হামলা চালিয়েছিল, আজও তারাই হামলা করেছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ সুত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৮ জন শিক্ষার্থী আহতাবস্থায় ভর্তি হয়েছে। তারা হচ্ছেন ঢাবির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান (২১), সুসমিতা রয়েল লিসা (২৩), তুষার (২৪), মারুফ (২৫) ও শিমন্তী (২৬), বুয়েটের রাকিন (২৩) আইইউবি’র ছাত্র এনামুল হক (২৪) ও তামিম (২৩)। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তদের হামলায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি)-র সাংবাদিক এ এইচ আহাদসহ স্থানীয় গণমাধ্যমের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ব্যাপক মারধরের শিকার হন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও রেহাই পাননি তারা।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার দখল নিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আর পুলিশ রয়েছে স্টার কাবারের পেছনের গলির দিকে। অন্যদিকে, হামলায় আহত হয়ে শিক্ষার্থদের একাংশ বেল টাওয়ারের দিকে ধানমন্ডি এক নম্বর সড়ক দিয়ে নিউ মার্কেট ও বাটা সিগন্যালের দিকে সরে গেছে। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কারা হামলা চালিয়েছে তা আমরা জানি না। আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি।’

সাইন্সল্যাব মোড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশি অস্ত্র ও লঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তাদের পরিচয় আমরা জানি না। আমরা আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওযার পর তারা বিভিন্ন দিকে সরে গেছে। এখন ফুটওভার ব্রিজের নিচে কারা তা আমরা জানি না।’

তবে এ মন্তব্য করার সময়েও এই পুলিশ কর্মকর্তার খানিক দূরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার প্রতিবাদে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে। তাদের টানা সপ্তম দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল গতকাল শনিবার। এদিন সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে জিগাতলা এলাকায় স্থানীয় চারটি কলেজের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে হঠাৎ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছু ক্যাডার হামলা চালায়। হামলার প্রতিবাদে রবিবার আবারো রাজপথে নামে শিক্ষার্থীরা।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৭৫১ঘ.)