আরাফাত রহমান কোকোর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আরাফাত রহমান কোকোর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ ২৪ জানুয়ারি, বুধবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপির চেয়ারপারসন, তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক আরাফাত রহমান কোকোর চতুর্থ মৃত্যুবাষিকী। এ উপলক্ষে জিয়া পরিবার, বিএনপি ও আরাফাত রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, দোয়া, কোরআন খানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি দেশের গণআন্দোলনের এক শ্বাসরুদ্ধকর সময়ে মা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের নিজ অফিসে পুলিশি অবরুদ্ধ থাকাবস্থায় মালয়েশিয়ায় আকস্মিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আরাফাত রহমান কোকো। তার অকাল মৃত্যুতে দেশবাসী শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলেন। অবরুদ্ধ মা বেগম খালেদা জিয়া প্রিয় পুত্রের লাশ ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। সরকারের পক্ষে তার লাশ দেখা ও সমবেদনা নিয়ে হয়েছিল ঘৃণ্য রাজনীতির কূটকৌশল। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আদরের ছোট সন্তান হলেও কোকোকে দেশ-বিদেশের মানুষ প্রথম জানতে পারলো ১/১১-এর সেনাসমর্থিত মইন-ফখরুদ্দীন সরকার কর্তৃক মা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তার গ্রেফতারের পর থেকেই। রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচন্ড নির্যাতন করে তাকে পঙ্গু করা হয়। নির্যাতনের ফলে কোকোর হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সে সময়ে সংবাদপত্রের ছবি এবং টিভির ভিডিওগুলোর কথা যাদের মনে আছে তারা হয়তো স্মরণ করতে পারবেন যে, কোকোকে সব সময় বুক চেপে ধরে থাকতে দেখা যেতো। সেই সময় থেকেই তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন।

২০০৮ সালের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে থাইল্যান্ডে যান কোকো। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় স্ত্রী ও দু কন্যাসহ অবস্থান করছিলেন। একদিকে বিদেশে তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, অন্যদিকে দেশে মা বেগম খালেদা জিয়ার ওপর সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনের খবরে তিনি ছিলেন চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এ অবস্থায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঘর আলোকিত করে ১৯৭০ সালের ১২ আগস্ট আরাফাত রহমান কোকো জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এর কিছুদিন পরই শুরু হয় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাবা তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে বিদ্রোহ করে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে দেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১৬ মে ১৯৭১ সালে নৌপথে মা বেগম খালেদা জিয়া দুই পুত্রসহ ঢাকায় চলে আসেন। বড় বোন খুরশীদ জাহানের বাসায় ১৭ জুন পর্যন্ত থাকেন সপরিবারে। ২ জুলাই ১৯৭১ সিদ্ধেশ্বরীতে এস আব্দুল্লাহর বাসা থেকে পাকিস্তানি সেনারা দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ মা বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বন্দি ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর ’৭১ বাংলাদেশ স্বাধীন হলে মা-ভাইসহ কোকোও মুক্তি পান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে পিতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে শহীদ হবার পর মা বেগম খালেদা জিয়ার একক স্নেহ, ভালোবাসা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে বড় হয়ে ওঠেন আরাফাত রহমান কোকো। ছোটকাল থেকেই চুপচাপ স্বভাবের কারণেই তার ওপর মা’র দুর্বলতাটা একটু বেশিই ছিলো।

রাজনৈতিক পরিবারে তার জন্ম হলেও তিনি রাজনীতিক হিসেবে নয়, একজন ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ব্যবসা, ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেই নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রেখেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান হয়েও তার মধ্যে কোনো অহঙ্কার ছিল না। একজন সাধারণ মানুষের মত তিনি জীবনযাপন করতেন।

মিতবাক, সজ্জন এবং সাদাসিধে এ মানুষটার খুব ঘনিষ্ঠজনরা জানেন তার সাদাসিধে জীবন সম্পর্কে। একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়েও নব্বইয়ের দশকে তিনি বাকিতে মোটরসাইকেলের তেল কিনতেন। অবিশ্বাস্য মনে হতেই পারে। এছাড়া তিনি মাঝে মধ্যেই খেলনা আর চকলেট নিয়ে পথশিশুদের কাছে ‘সারপ্রাইজ’ হিসেবে হাজির হতেন। তাদের সাথে ক্রিকেট খেলতেন। মালয়েশিয়াতে অবস্থানকালেও তিনি খুবই সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। একটি দুই বেডের ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। নিজেই প্রতিদিন দুই মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং নিয়ে আসতেন। বিনয়ী ও প্রচারবিমুখ কোকোর চরম শত্রুরাও তার ব্যক্তি চরিত্রের কোনো ত্রুটির কথা বলতে পারবেন না।

ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে এ ক্রিকেটপ্রেমী ছুটে বেড়িয়েছিলেন শহর থেকে গ্রামে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে ২০০৩ সালে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সেই সাথে বিসিবির একজন সদস্যও ছিলেন তিনি। ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য যে কর্মসূচি শুরু করেছিলেন তিনি বর্তমানে তার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য ক্রিকেটকে জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা-গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া তিনি মোহামেডান কাবের এক্সিকিউটিভ কমিটির কালচারাল সেক্রেটারি ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে যুক্ত হওয়ার পর ক্রিকেটের অনেক উন্নয়ন করেছেন তিনি। ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য যা যা করার তাই করেছেন মরহুম এই ক্রীড়াপ্রেমী।

আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর থেকে প্রতিবছর বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আত্মীয়স্বজন ও দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিলে শরিক হলেও এবার তিনি কারান্তরীণ থাকায় পারছেন না। তবে আরাফাত রহমান কোকোর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ২৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় বনানীস্থ কবরস্থানে মরহুমের কবরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজন ও দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ফাতেহা পাঠ করবেন ও দোয়া মাহফিলে শরিক হবেন। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর থেকে প্রতিবছর বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আত্মীয়স্বজন ও দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিলে শরিক হলেও এবার তিনি পারছেন না। এছাড়াও বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিলে অংশ নেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য সামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল করি খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়াও আজ গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাদ মাগরিব আরাফাত রহমান কোকোর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

একে/