বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ

একদিন আ’লীগ সরকারকে জবাবদিহি করতেই হবে : মির্জা আলমগীর

একদিন আ’লীগ সরকারকে জবাবদিহি করতেই হবে : মির্জা আলমগীর

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গণতন্ত্র হরণ করেছে, বিচার বিভাগ ধ্বংস করেছে, ব্যাংক লুটপাট করেছে, গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে, মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। একদিন আওয়ামী লীগ সরকারকে এর জন্য জবাবদিহি করতেই হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

দলীয় চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বর্তমান সংসদ বাতিল ও পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থার দাবিতে খুলনা বিভাগীয় বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া হলেন দেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। যিনি এই দেশের গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন, দেশের উন্নয়নে কাজ করেছেন, সেই খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে ঠিকমত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তাঁর ব্লাড সুগার ওঠানামা করছে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, বিচারপতি খায়রুলের একটি রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার বিনষ্ট করে দেয়া হয়েছে। ৩০ তারিখে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখ রাতেই হয়ে গেছে। একদলীয় নির্বাচন জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, গণতন্ত্র সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে এই সরকার।

তিনি এই সরকারকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ দাবি করে বলেন, এ দেশে সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। এখন আদালতের মধ্যেই দিনে-দুপুরে বিচারকের সামনে মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। দেশে একের পর এক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে।

তিনি বলেন, তিন বছরের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এখন কারো জীবনেরই নিরাপত্তা নেই। মানুষ এই অবস্থার মধ্য থেকে পরিত্রাণ চায়।

তিনি বলেন, কোন দেশে আমরা বাস করছি। একের পর এক ধর্ষণ সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষকে আজ অনিরাপদ-অনিশ্চিত অবস্থায় ঠেলে দেয়া হচ্ছে। জনগণের উপর ভ্যাট চাপিয়ে এ বাজেট করা হয়েছে। এই বাজেটে জনগণকে আরো দরিদ্র করা হয়েছে। ব্যাংক, শেয়ার মার্কেট লুট হয়েছে। এ সরকার সবকিছুতেই ব্যর্থ হয়েছে। কৃষকেরা ধানের মূল্য পায় না। শ্রমিক তার নায্য মূল্য পায় না। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও শ্রমিকদের বেতন নিশ্চিত করা হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণতন্ত্রকে বারবার জবাই করেছে আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি। আর উদ্ধার করেছে বিএনপি। এ সরকারের আমলে যারা অন্যায় করবে তারা সবকিছু পাবে। কিন্তু কৃষকেরা ন্যায্য দাম না পেয়ে ফসল আগুনে পুড়াবে। এ সরকার মামলাবাজ সরকার। তারা ডেঙ্গু মশা মারতে পারে না কিন্তু বিএনপি নেতা-কর্মীদের মারতে পারে। অর্থমন্ত্রী অফিসে যান না ডেঙ্গুর ভয়ে। যে দেশের সচিবালয় পর্যন্ত এডিসমশা মুক্ত নয়, সে দেশ কোনো কিছু থেকে মুক্ত নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেন, আমি এসেছি শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি নিয়ে। ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখে চুরি করেছে সেজন্য তার পদত্যাগ চাই। আমাদের বিদেশী বন্ধুরা যারা এ সরকারকে বৈধতা দিয়েছে তাদেরকে আমরা চাই না। খালেদা মুক্তির চেয়ে জরুরী হয়ে পড়েছে এ সরকারের পতন। এ সরকারের পতন হলেই গণতন্ত্রের মা দ্রুত মুক্তি পাবেন। যারা ব্যাংকের টাকা পাচার করেছে তাদের টাকা হালাল করেছে। গরীবের কষ্টের জমানো এ টাকা সরকার চুরি করে সাবাড় করেছে।

বিএনপি নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ বলেন, আ’লীগ আইনের ভাষা বোঝে না, গণতন্ত্রের ভাষা বোঝে না। তারা রাস্তা বন্ধ করে জনসভা করে। আর আমরা করতে পারি না। খালেদা জিয়াকে আইনের মাধ্যমে মুক্ত করতে না পারলেও এদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে মুক্ত করা হবে। ৭১ এবং ৯০এ যেমন এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের পাশে ছিলো এবারও এ সরকারের হাত থেকে মুক্ত করতে জনগণ বিএনপির পাশে থাকবে।

সমাবেশে অভিযোগ করা হয়- সমাবেশে আসার পথে সরকার দলীয় ক্যাডাররা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, মংলা, খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানসহ পথে পথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। অনেক বাধা বিপত্তি ও বৈরী আবহাওয়া অতিক্রম করে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে শহীদ হাদিস পার্ক লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সাবেক ছাত্র নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, মানবাধিকার সম্পাদক এডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান খান বাবু, সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ-ধর্ম সম্পাদক অমলিন্দু দাস অপু, সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলি।

অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, তাঁতীদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম-আহবায়ক এ কে এম ওয়াজেদ।

খুলনা বিভাগের বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- খুলনা জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা, যশোর জেলার আহবায়ক অধ্যাপিকা নার্গিস বেগম, বাগেরহাট জেলার সভাপতি এম এ সালাম, সাতক্ষীরা জেলার আহবায়ক রহমতউল্লাহ পলাশ, নড়াইল জেলা সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, মেহেরপুর জেলার সভাপতি মাসুদ অরুন, যশোর থেকে মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।

খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগরীর সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. গাজী আব্দুল হক ও নগরীর যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম।

খুলনা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ হোসেন রনি, সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক এডভোকেট গাজী আব্দুল বারী, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নুরুল হাসান রুবা, মহিলা দলের নগর সভাপতি সৈয়দা রেহানা আকতার, জেলা সভাপতি এডভোকেট তছলিমা খাতুন ছন্দা, যুবদলের নগর সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারু, জেলা সভাপতি শামীম কবির, স্বেচ্ছাসেবক দলের নগর সভাপতি একরামুল হক হেলাল, জেলা সভাপতি মোঃ তৈয়েবুর রহমান, শ্রমিক দলের জেলা সভাপতি উজ্জল কুমার সাহা, নগর সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান, ছাত্রদলের নগর সভাপতি শরীফুল ইসলাম বাবু, জেলা সভাপতি আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি প্রমুখ।

এর আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মহানগরী ওলামা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ শফিকুল ইসলাম। এরপর জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের শিল্পীরা দলীয় ও দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

এমজে/