৪ দিনে বিএনপির ২৭৫ নেতা-কর্মী আটক

নিজ বাসা থেকে আমান-আলম, উত্তরা থেকে মোশাররফ আটক

নিজ বাসা থেকে আমান-আলম, উত্তরা থেকে মোশাররফ আটক

ঢাকা, ২ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান এবং নির্বাহী সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব-১)। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মহাখালী ডিওএইচএস (রোড নাম্বার ৩১) এর বাসা থেকে তাদের আটক করা হয়।

আমান উল্লাহ আমানের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুস সোবহান স্বপন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আমানের বিরুদ্ধে ২৩৭টি মামলা ও নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ১২-১৩টি মামলা থাকলেও সবগুলোতে তারা জামিনে ছিলেন। সন্ধ্যার পর থেকে এ দুই নেতার বাসা ঘেরাও করে রাখে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তাদের আটক করে।

এর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেনকে উত্তরা থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার আগে পুলিশের উপর হামলার মামলায় আটক করা হয়েছে তাকে।

বেগম খালেদা জিয়ার মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মোশাররফ হোসেন টঙ্গি থেকে ঢাকায় ফেরার পথে উত্তরার কাছ থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। তবে ছাত্রদলের এই সাবেক নেতাকে আটকের বিষয়ে পুলিশের কোনো ভাষ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ শুক্রবার বিকালে গণমাধ্যমকে বলেন, গত তিন দিনে দলের যেসব নেতাদের আটকের খবরা করা হয়েছে পুলিশের উপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠাতে দেখা গেছে।

৪ দিনে বিএনপির ২৭৫ নেতা-কর্মী আটক

গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে আটক নেতাদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে আটক করে। পরে তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গণ শিক্ষা বিষয়ক সহ সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা আটক হন।

গত চারদিনে প্রায় ২৭৫ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৩৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম টিপুকে শাহবাগ থেকে উঠিয়ে নিয়েছে র‍্যাব। এছাড়া গতকাল আরও কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব, চকবাজার থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম রাসেল, শাহবাগ থানা বিএনপি নেতা মো. খলিল, মতিঝিল থানা বিএনপি নেতা রানী বাবু, খিলগাঁও থানা বিএনপি নেতা আমির সর্দার, রোমান, লিংকন, ঢাকা মহানগর উত্তর রুপনগর থানা বিএনপি নেতা মো. মুক্তার হোসেন, উত্তর পশ্চিম থানা বিএনপি নেতা রহমত উল্লাহ দুলাল, তোজাম্মেল হক সোহাগকে আটক করা হয়েছে।

রিজভী আহমেদ বলেন, এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি মো. মাসুদ খানের বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার ছোট ভাই রাহাত খান, দারুস সালাম থানা বিএনপি নেতা জাকির হোসেন সজীব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোমিনুল হক, জেলা যুবদলের সদস্য শরীফ হোসেন, শেরেবাংলা নগর থানা বিএনপি নেতা আলমগীর, রুপনগর থানা বিএনপি নেতা মুক্তার হোসেন, পল্লবী থানা মহিলা দল নেত্রী সৈয়দ দিলারা কলি, মনোয়ারা বেগম, এডভোকেট সাহিদা, মোসা. শামীমা, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন, তুষার, আসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দল কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুমনসহ অনেক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জুর মিরপুরের বাসভবন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি মীর হোসেন মীরু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল চেয়ারম্যান, দারুস সালাম থানা বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির, দারুস সালাম থানা শাখা মহিলা দলের সভানেত্রী নাজমা কবির এবং শ্যামপুর থানা বিএনপি নেতা আ ন ম সাইফুলের বাসাসহ দলীয় অনেক নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে আটক এবং নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় লাগাতার তল্লাশির ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে সরকারকে এ ধরনের হিংস্রতা থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে গ্রেফতার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া, বেলাল আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, আবদুল মালেক প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২১০ঘ.)