‘বন্ধুরা চাননি ওসমানীর কাছে নিয়াজী আত্মসমর্পণ করুন’

‘বন্ধুরা চাননি ওসমানীর কাছে নিয়াজী আত্মসমর্পণ করুন’

স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কেন মুক্তিবাহিনীর প্রধান জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ছিলেন না, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সেসময়কার ‘এস ফোর্স’র প্রধান কেএম শফিউল্লাহ বীর উত্তম বলছেন, আমাদের বন্ধুরা চাননি মুক্তিবাহিনীর প্রধান জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করুক। তাই তাকে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আসতে দেওয়া হয়নি।

রবিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে জেনারেল এমএজি ওসমানী ১০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ওই প্রশ্নের জবাবে কেএম শফিউল্লাহ একথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ওসমানীর খুব কাছের ছিলেন কেএম শফিউল্লাহ, যাকে প্রধান করে বিশেষ ‘এস ফোর্স’ গঠন করা হয়েছিল। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান তাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন।

অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার (জেনারেল ওসমানী) রণকৌশল নিয়ে বিতর্ক ছিল। কিন্তু তার নেতৃত্বেই ১৯ নভেম্বর (১৯৭১) সেনাবাহিনী গঠন হয়। তিনি হন সেনাবাহিনীর প্রধান। একটি বিষয় স্পষ্ট নয়, তিনি কেন আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ছিলেন না। তার হেলিকপ্টারে গুলি করা হয়েছিল তখন। তার স্টাফ রব আহত হন বলে জানি। কিন্তু সে ঘটনা কেউ বলেন না। আপনি (কেএম শফিউল্লাহ) সেটা বলবেন।

মেনন বলেন, ভারত সবসময় বলে, যুদ্ধটা ছিল পাক-ভারতের। ভারতের কাছেই তারা আত্মসমর্পণ করেছে। ভারত আমাদের সহায়তা করেছে, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা আমরা রক্ত দিয়ে অর্জন করেছি। আমাদের স্বাধীনতা কারও দানের নয়। উপ-সর্বাধিনায়ক এ কে খন্দকারও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আমাদের কারও স্বাক্ষর নেই আত্মসমর্পণ দলিলে। এটা হয়তো ওসমানীর আমৃত্যু কষ্ট ছিল।

মেননের বক্তব্যের পর কেএম শফিউল্লাহ বলেন, কেন (জেনারেল ওসমানী আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে) উপস্থিত ছিলেন না তা বলার জন্য এসেছি। (১৯৭১ সালের) ১৬ ডিসেম্বর তিনি কুমিল্লা সার্কিট হাউসে ছিলেন। তিনি আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে আসতে দেওয়া হয়নি। পরে আমার পজিশনের (এলাকা) ওপর দিয়েই তিনি মৌলভীবাজারে যান। সেখানে তার হেলিকপ্টারে গুলি করা হয়। গুলিটা কে করেছে? তখন তো কোনো পাকিস্তানি আর্মি ছিল না। তাহলে কে গুলি করেছে?

মুক্তিযুদ্ধের এ সেনানী বলেন, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অরোরা (ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল জগজিত সিং অরোরা) ছিলেন। আমি নিজে উপস্থিত থেকে দেখেছি। নিয়াজী (পাকিস্তানি বাহিনীর লেফটেন্যান্ট আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী) সাইন (স্বাক্ষর) করছিলেন আত্মসমর্পণ দলিলে। টান দিয়ে নিয়ে নেওয়া হলো। তিনি পুরো সাইন করতেও পারেননি। শুধু ‘নিয়া’ লিখতে পেরেছিলেন, ‘জী’ লিখতে পারেননি। সেটা দেখে জেনারেল অরোরাকে বললাম, সাইন পুরো করেনি, তখন আবার দেওয়া হলো, এরপর ‘জী’ যোগ করা হলো।

কেএম শফিউল্লাহ বলেন, আমার মনে হয়, আমাদের বন্ধুরা (ভারত) চাননি যে, তিনি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে থাকুন। তাই তিনি থাকেননি। আমার চোখের সামনে এগুলো ঘটেছে।

‘বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি পরিষদ’ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সৈয়দা মাসুদা খাজা। অন্যদের মধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালেক, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. একে আব্দুল মুবিন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস ইনাম আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।