ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার শাসন ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করে গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আপনি (শেখ হাসিনা) স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দ্রুত সরে যান। নির্বাচন ঘোষণা করেন।
রবিবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আবরার হত্যার প্রতিবাদে নাগরিক সভা ও শোকর্যালির আয়োজনে তিনি এসব কথা বলেন।
৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি সাক্ষী দেব তৃতীয়বার আপনাকে কেউ নির্বাচিত করে নাই। আপনি স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আপনি দ্রুত সরে যান। নির্বাচন ঘোষণা করেন। এগুলো দলীয় কোনো চাওয়া নয়। সংবিধানের দাবি।’
যিনি দেশ শাসন করছেন, বুয়েটে নিহত আবরার ফাহাদের হত্যাকারীরা তাঁর অনুসারী বলে উল্লেখ করেন কামাল হোসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ না করে তা উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এই আপনার (প্রধানমন্ত্রী) আদর্শ?’ ড. কামাল প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আবাররকে যারা হত্যা করল, এরা কার আদর্শের অনুসারী? যিনি দেশ শাসন করছেন। এই আপনার আদর্শ? তা যদি হয়ে থাকে আপনার তো এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকা উচিত না।’ তিনি আরও বলেন, সবার চাওয়া প্রধানমন্ত্রী যেন দেশ শাসন করা থেকে সরে দাঁড়ান। সন্ত্রাসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বলেন, আবরার কী অন্যায় করেছিল। এটা সংবিধানের ওপর আঘাত।
আবরারের হত্যাকারীরা পশু উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘ছেলেদেরকে আপনারা পশু বানাচ্ছেন কেন? এই বাংলার ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল, এরা সাহসী ছিল। এদের বানাচ্ছেন পশু। এই ছেলেদের যদি দেশ গড়ার কর্মী হিসেবে লালন করা হয় তারা দেশকে অনেক কিছু দিতে পারবে। কিন্তু তা না করে হত্যাকারী বানাচ্ছেন।’ ছেলেদের যারা পশু বানাচ্ছে তাদের বিচার করা হবে বলে জানান। রাষ্ট্র ক্ষমতার প্রশ্রয় দিয়ে পশু বানানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।
কামাল হোসেন বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, যে সরকারি দল আছে, শাসন করছে, এই দলে তো আমরা সবাই ছিলাম। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে স্বাধীন করেছি বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে। সেই দলের নাম নিয়ে যা হচ্ছে তাতে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে। কী আশ্চর্য ব্যাপার। সামান্যতম দায়িত্ব বোধ হবে না যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশকে? ’
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অধিকারকে বন্ধুক আর পুলিশ দিয়ে বঞ্চিত করা যাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে কামাল হোসেন বলেন, ‘সময় থাকতে মাথা ঠান্ডা করে দেশকে আপনার কু-শাসন থেকে মুক্ত করেন। যথেষ্ট হয়েছে। আর কত!
সভায় জানানো হয়, আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় কোনো উন্মুক্ত কোনো স্থানে আবরারের নিহতের ঘটনায় শোক সভা হবে। এ ছাড়া আবারারের কবর জিয়ারত করতেও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যাবেন বলে জানানো হয়, তবে কোনো তারিখ উল্লেখ করেনি এই জোট।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব দাবি করেন স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ প্রথম ছাত্র হত্যা শুরু করে। এ ছাড়া বলেন, ছাত্রলীগকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় করা হয়েছে, সরকারকেও এভাবে বিদায় করা হবে।
সরকার ভয় পেয়ে বিরোধী মতকে ধমকাচ্ছে অভিযোগ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ধমকালেও তাঁরা মাথা নত করবেন না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি থাকলে আবরার মরত না। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করে সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার ও হলের দখলদারি বন্ধ করার দাবি জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আবরারের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে রাজপথে নামতে হবে। ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দলের কেন্দ্রের একাধিক নেতা উপস্থিত থাকলেও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আর কেউ সমাবেশে ছিলেন না।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, আবু সাইয়িদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি চিকিৎসক জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে একটি শোকর্যালি বের করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে প্রেসক্লাব থেকে কয়েক কদম এগোনোর পরেই পুলিশ তাদের বাবা দেয়। পরে অসম আবদুর রব সেখানে এর নিন্দা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এ বাধার প্রতিবাদে আগামী ২২ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্ট সমাবেশ করবে।