ভেঙে যাচ্ছে বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট!

ভেঙে যাচ্ছে বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট!

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বে ১১টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনি ঐক্য গড়ে জোটটি। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী ও তার দলের মহাসচিব মেজর মান্নান। এতে জোটের অন্য শরিকরা মনক্ষুণ্ন হলেও নির্বাচন পরবর্তী সুযোগ-সুবিধার আশায় চুপ ছিলেন। কিন্তু চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে না পেরে এখন জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

যুক্তফ্রন্টের শরিকরা বলছেন, ‘‘সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারার আসন সমঝোতার বিষয় ও পরবর্তীতে বিভিন্ন ইস্যুতে জোটে অস্থিরতা তৈরি হয়। এরপরও চলতি অর্থবছরের বাজেট পেশের পর ২৫ জুন যুক্তফ্রন্টের উদ্যোগে ‘বাজেট ২০১৯-২০২০, বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সবগুলো দল অংশ নেয়। এরপর থেকে যুক্তফ্রন্টের রাজনৈতিক কোনও কার্যক্রম নেই। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বি. চৌধুরীর নামে প্রেস রিলিজ দেন তার প্রেস সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আলম। যদিও এসব প্রেস রিলিজ দেওয়ার আগে জোটের শরিকদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয় না। আমরাও এই নিয়ে কোনও আপত্তি করি না। কারণ জোট নিয়ে শরিকদের এখন আগ্রহ নেই।’

যুক্তফ্রন্টের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, ‘চলতি অর্থ বছরের বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভার পর থেকে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই।’ তাহলে ন্যাপ কী যুক্তফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা যুক্তফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা দেইনি। তবে বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভার পর থেকে আমরা জোটের কোনও কার্যক্রমে অংশ নেইনি।’

জোটের শরিক দলের নেতাদের দাবি, ১১টি দল ও কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলেও লাভবান হয়েছে একমাত্র বিকল্পধারা। জোটের অন্যদলগুলো কথা চিন্তা না করে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারার নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে। তারা ২টি আসনে পেয়েছে। ক্ষমতাসীন দলও শুধু মাহী বি. চৌধুরী ও মেজর মান্নানের দুটি আসনে ছাড় দিয়েছে। অন্য কোনও দলের নেতাদের ছাড় দেয়নি। এই নিয়ে জোটের শরিকরা মনক্ষুণ্নও হয়। তখনি এই জোট শেষ হয়ে গেছে। তারপরও কেউ কেউ নির্বাচন পরবর্তী সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু তা না পেয়ে সবাই হতাশ। তাই সবাই জোট ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জাতীয় জনতা পার্টির সভাপতি শেখ আসাদ বলেন, ‘যেদিন সবকিছু বিসর্জন দিয়ে বিকল্পধারা শুধু নিজেদের জন্য দুটি আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেছে, যুক্তফ্রন্ট সেদিনই শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। তবে জোটের কিছু শরিকদলের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগের কারণে তাদের প্রোগ্রামে আমি যাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তফ্রন্টের শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার জন্য বিকল্পধারা বিএনপির কাছে ১৫০ আসন ছেয়েছিল। কিন্তু সেই বি. চৌধুরী মাত্র ২টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করলেন। তখন তার ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা কোথায় গেলো? আসলে নিজের ছেলেকে এমপি বানানোর জন্য কিছু দলকে ব্যবহার করেছেন বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বি. চৌধুরী ও মেজর মান্নানকে একাধিক দিন ফোনও করে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী জোটের নিষ্ক্রিয়তার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন,‘আমরা মাঝে মাঝে কিছু প্রোগ্রাম করে থাকি। তবে জোটের শরিকদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই।’ তাহলে যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে শমসের মবিন বলেন, ‘সেটা বলা যাবে না। কারণ এখনও জোট ভেঙে যায়নি।’

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপিকে ১৫০ আসন এবং জামায়াতকে ত্যাগ করার শর্ত দিলে তাদের বাদ দিয়েই ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। এরপর বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। এই জোটের শরিকরা হলো বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বিএলডিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপি, জাতীয় জনতা পার্টি, বাংলাদেশে জাতীয় পার্টি, গণসাংস্কৃতিক দল, বাংলাদেশ জনতা লীগ, বাংলাদেশ শরীয়া আন্দোলন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি ইউনাইটেড ফ্রন্ট। দলগুলোর মধ্যে বিকল্পধারা, ন্যাপ ও গণফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত।

এমজে/