জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বাদ মাগরিব উপজেলার রামদয়াল আব্দুল হাদী কলেজ মাঠে শফিউল বারী বাবুর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, গণমান্য ব্যক্তি ও স্বজনরাসহ লাখো মানুষ অংশ নেন।
শফিউল বারী বাবু মঙ্গলবার ভোর রাত ৪টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির প্রথম জানাজা রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টার পর এই জানাজা হয়। এতে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী।
জানাজা শেষে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে শফিউল বারী বাবুর কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির মহাসচিবসহ তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবু ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এ ছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছিলেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫১ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
গতকাল রাতে শফিউল বারী বাবুকে রাজধানী ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত পৌনে ২টার দিকে তাঁকে এভার কেয়ার হাসপাতালে (সাবেক এ্যাপোলো) স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হলে ফলাফল নেগেটিভ আসে।
গণতন্ত্রের লড়াইয়ে তিনি ছিলেন নির্ভীক প্রাণ এক। সামনের কাতারে থেকেই অংশ নিয়েছেন জনগণের ভোটাধিকার আর অধিকার প্রতিষ্ঠার সকল আন্দোলনে।
এক নজরে শফিউল বারী বাবু
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন শফিউল বারী বাবু। যোগ দেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতিতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিএনপির ও এর সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক পদে কাজ করেছেন নিরলসভাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল থেকেছেন তরুণদের নেতা হিসেবে। আমৃত্যু লড়েছেন শহীদ জিয়া প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির আদর্শ বাস্তবায়নে।
দলের সব সংকটকালে তার সাহসী নেতৃত্ব ছিল নেতা-কর্মীদের জন্য প্রেরণার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকে বারবার কারাভোগের নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
শফিউল বারী বাবু ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ছাত্ররাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছিলেন। সৎ, কর্মীঘনিষ্ঠ ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে তার পরিচয় পাওয়া যায় ছাত্রজীবন থেকেই। রাজনীতিকেই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
দলের কর্মসূচি পালনে বাবু ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হিসেবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপদ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিপর্যস্ত, আতঙ্কিত আর নিরন্ন মানুষের কাছে ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন তিনি দুয়ারে দুয়ারে। গণমানুষের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন বাবু।