খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি বলায় বৃটিশ হাইকমিশনারকে তলব করে শাসালো সরকার!

খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি বলায় বৃটিশ হাইকমিশনারকে তলব করে শাসালো সরকার!

শর্তসাপেক্ষে ‘মুক্তি’র নামে কার্যত গৃহবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘গৃহবন্দি’ বলায় বৃটেনের উপর বেজায় চটেছে বাংলাদেশ সরকার। ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনারকে তলব করে রীতিমতো শাসালো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়! যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেলকে ডেকে নিয়ে কড়া কৈফিয়ত তলব করে সরকার। শুধু তাই নয় যুক্তরাজ্য সরকার যাতে বাংলাদেশ সরকার কিংবা ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগের বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে যেন সতর্ক থাকে তাও শুনিয়ে দেয়া হয়েছে ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে।

বাংলাদেশের রাজনীতি করার অধিকার নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করে গত বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র বিষয়ক ২০২০ সালের উপর প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, শর্তারোপ করে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। সরকারি আদেশে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হলেও দেশে চিকিৎসা নেয়া এবং বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ ছাড়াও ওই প্রতিবদেনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তোলে ধরা হয়।

বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত শীর্ষ অনেক সংবাদমাধ্যম যুক্ত্রাজ্যের মানবাধিকার রিপোর্ট এড়িয়ে গেলেও এর উপর ভিত্তি করে স্ববিস্তার রিপোর্ট করে জাস্ট নিউজ।

এই প্রতিবেদনের জেরেই রবিবার (১১ জুলাই) হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেলকে জরুরি তলব করে বাংলাদেশ সরকার।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পশ্চিম ইউরোপ ও ইইউ) ফাইয়াজ মুরশিদ কাজীর দপ্তরে হাইকমিশনারকে ডেকে নেয়া হয়। তলবের ওই খবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে প্রচার করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অধ্যায়ে এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশকে হতাশ করেছে। বিশেষ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থানকে ‘হাউস অ্যারেস্ট’ (গৃহবন্দী) হিসেবে মন্তব্য করা চরম বিভ্রান্তিমূলক। খালেদা জিয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারকে জানানো হয়েছে, তার ভাইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফৌজদারি দণ্ডবিধি-১৮৯৮ অনুসারে তার কারাদণ্ড স্থগিত করে গত বছরের ২০ মার্চ তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্তি দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া বিদেশ যাবেন না, দেশে চিকিৎসা নেবেন, এই শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য কারাদণ্ড স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। পরে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর ও ২০২১ সালের মার্চে দুই দফায় তার কারাদণ্ড স্থগিত করে মুক্তির আদেশের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থানের বিষয় নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকলে যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকার যাতে বাংলাদেশ সরকার কিংবা সরকারি দল আওয়ামী লীগের বিষয়ে কটাক্ষমূলক ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে, সেটি তলবের সময় ব্রিটিশ দূতকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের পর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারকে বলা হয়, ওই প্রতিবদেন খালেদা জিয়ার কারাগার থেকে মুক্তি পরবর্তী সময়ে বাসায় অবস্থানের বিষয়ে ‘হাউজ এরেস্ট’ শব্দগুচ্ছকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা মিসলিডিং বা বিভ্রান্তিমূলক। 

যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেল বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়গুলো তার দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তুলে ধরবেন বলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।

জাভেদ প্যাটেল ঢাকাকে জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়নি।

যুক্তরাজ্যের মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে মন্তব্য নিয়েও সরকার উদ্বেগ জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনে বাংলাদেশে অবস্থানের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের যেভাবে অভিহিত করা হয়েছে, তা যেমন আন্তর্জাতিকভাবে ঠিক নয়, তেমনি তা বাংলাদেশের আইনেও স্বীকৃত নয়।

কেবি/