কী কারণে যুবলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো ব্যারিস্টার সুমনকে?

কী কারণে যুবলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো ব্যারিস্টার সুমনকে?

আওয়ামী যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে সাময়িক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে যুবলীগের তরফ থেকে জানানো হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলা হয়নি। তবে, যুবলীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক শ্লোগান ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা শরীয়তপুরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেনের তীব্র সমালোচনা করেন ব্যারিস্টার সুমন। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। এর জের ধরে তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। সুমনের রাজনৈতিক চেতনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

শুক্রবার (৬ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে গিয়ে যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, শেখ কামাল সাহেবের জন্মদিনে শরীয়তপুরের পালং থানার ওসি আক্তার হোসেনে দেয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই জিনিসটা দেখার পর আমার কাছে মনে হয়েছে দু-একটা কথা বলা দরকার। আওয়ামী লীগের শ্লোগান দেয়ার মানুষ কী এতই কম যে একজন ওসি সাহেবের এই শ্লোগান দিতে হবে। আমি খেয়াল করে দেখলাম যে উনি বলছেন আবেগ থেকেই শ্লোগান দিয়েছেন। আমার কথা হচ্ছে, আপনি যখন সরকারি দায়িত্বে থাকবেন কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আবেগ দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে পানিশমেন্ট নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু তিনি এখনো ওই জায়গাতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন।

পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন আরও বলেন, আবেগ দেখানো ভালো। কিন্তু আপনি যখন আবেগ দেখাতে গিয়ে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিলেন, তখন সরকারের কিন্তু অনেক ক্ষতি করে দিলেন। অনেক ওসি এবং পুলিশ কর্মকর্তারা দলমতের ঊর্ধ্বে দেশের সেবা করে যাচ্ছেন। এই ওসির কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

সবাইকে সতর্ক করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, সামান্য চাকরিজীবী লীগের কারণে সরকার কতো কঠোর আপনারা জানেন। হেলেনা জাহাঙ্গীরকে সরকার আটক করেছে এমন ভুঁইফোঁড় চাকরিজীবী লীগ সংগঠন করায়। এখন এমন অবস্থা হইছে এ ধরনের ওসি সাহেবরা দু’দিন পরে বলবেন একটি পুলিশ লীগ করা যায় কিনা।

সতর্ক হওয়ার এখনই সবচেয়ে ভালো উল্লেখ করে লাইভে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, পঁচাত্তর সালে আমরা সতর্ক হতে পারিনি বলেই বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। আপনি যদি দলকে সত্যি ভালোবাসেন, তাহলে দলের প্রতি এমন কোনো আবেগ দেখাতে পারবেন না, এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যে কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনি যদি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের হয়ে কাজ করবেন, তখন এমন কোনো আবেগ দেখাতে পারবেন না, এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যে কারণে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে বিব্রত করেছেন।

আলোচিত ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপির কাছে অনুরোধ করব রাষ্ট্র-দল সবগুলাকে একাকার করার জন্য এবং বিশেষত এই সরকারকে কলঙ্কিত করার জন্য, বিব্রত করার জন্য, পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে বিব্রত করার জন্য তার (ওসির) বিরুদ্ধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যাকশন নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগের ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই কমিটিতে আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে জায়গা পান ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।