তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে: সিলেটের সমাবেশে মির্জা ফখরুল

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে: সিলেটের সমাবেশে মির্জা ফখরুল Photo: Abdul Mumin Imran

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন দিতে হলে অবশ্যই এর আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দীনের উচ্চারণ করাই হয়নি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীকেও আড়াল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ এ দেশের আপামর জনতা করেছেন, একজন ব্যক্তি বা একক কোনো দল নয়।

শনিবার বিকালে সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে সিলেট মুক্ত দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না। উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্পের কথা বললেও দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে, অর্থনীতি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। করোনায় মারা গেছেন বহু লোক, টিকা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। কিছু ফ্লাইওভার হচ্ছে, কিন্তু রাস্তাঘাট খারাপ হয়েছে। র্যা বের সদস্যদের আমেরিকা নিষিদ্ধ করেছে- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে মুক্ত নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য বাসযোগ্য একটি ভূমি রেখে যেতে ব্যর্থ হয়েছি। একাত্তরের স্বপ্ন ছিলো- একটি গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার।'

সরকারের উন্নয়নের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গুটিকয়েক মানুষ সরকারের ছত্রছায়ায় কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশে গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। যার প্রমাণস্বরূপ জনগণের ভোটে বার বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে কারাবাস করিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না।'

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, '১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেট শত্রুমুক্ত করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু জোর করে ক্ষমতায় থাকা এই সরকার প্রকৃত ইতিহাস মুছে দিয়ে একটি ভ্রান্ত গল্প নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চায়।'

সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করছে। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীনতার যুদ্ধের শুরু হয়েছে; এটা সরকার মানতে চায় না। গণতন্ত্র হত্যা, বাকস্বাধীনতা হরণ করছে আওয়ামী লীগ।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ করে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা যদি বিদ্রোহ না করতাম, মেজর জিয়া যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না করতেন ও অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে বিদ্রোহ না করতেন তাহলে মুক্তিযুদ্ধ হত না। এ দেশও স্বাধীন হত না। আজও পাকিস্তান থাকত। এটি হল প্রকৃত ইতিহাস। সুতরাং সময় এসেছে ইতিহাসকে ঠিক করার। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র। গণতন্ত্রকে বিলীন করে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেন, এ দেশের মানুষ জানে বলেই আওয়ামী লীগকে কখনও বিশ্বাস করে নাই। এখনও বিশ্বাস করে না বলেই আজকে আওয়ামী লীগ ভোটের রাজনীতি থেকে সরে গেছে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির আহবায়ক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম।

বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদির, এনামুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র জি কে গৌছ, সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, মহানগর বিএনপির আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। এর আগে সমাবেশে যোগ দিতে শনিবার দুপুরে বিমানে করে সিলেটে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা।