আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রা

‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে’

‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে’

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং দেশের উন্নয়নবিরোধী অগণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার শপথ এসেছে আওয়ামী লীগের ‘বিজয় শোভাযাত্রা’ থেকে। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন, ষড়যন্ত্র থেমে নেই, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। এখনও সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালির ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে।

আজ শনিবার দুপুরের পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ থেকে আওয়ামী লীগের আয়োজনে শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।

উদ্বোধনী বক্তব্যে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিলো, তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতাকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। কিন্তু বিভিন্ন পথ পরিক্রমার মধ্য দিয়ে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই স্বাধীনতা উদযাপন করতে পারছি।’

স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতার ত্যাগের কথা তুলে ধরে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এই স্বাধীনতার জন্য ২৩ বছরের মধ্যে সাড়ে ১৩ বছর কারা নির্যাতন ভোগ করেছিলেন। দুইবার ফাঁসির মঞ্চের আসামি হয়ে বাংলার মানুষের জীবনের জয়গান গেয়ে মুক্তিপাগল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার উষালগ্নে বঙ্গবন্ধু যখন এই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে সপরিবারের হত্যার মধ্য দিয়ে নব্য পাকিস্তান সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। যখন দল ভাঙার রাজনীতি এই দেশে জিয়াউর রহমান শুরু করে, এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হত্যা করে, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে; সেই মুহূর্তে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশের এসে হাল ধরেন।’

বঙ্গবন্ধুর মতো মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করছি তখন বারবার তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মতোই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। ১৯ বার মৃত্যুপথযাত্রী শেখ হাসিনা জীবিত আছেন বলেই বঙ্গবন্ধুর সেই অসমাপ্ত কাজ- বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাত্র কয়েক বছর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে ১৯৭৫ সালে হত্যার মধ্য দিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। সব ষড়যন্ত্র, হত্যা-খুনের রাজনীতি অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ৫০ বছর আগে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে বিজয় অর্জিত হয়েছিলো, তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিন্নভিন্ন করে এই বাঙালি জাতি এগিয়ে যাবে।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘পঁচাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হয়েছে। আজকে এই শোভাযাত্রা দাবি করে, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য যারা গ্রেনেড হামলা করেছিলো, তার নেপথ্য নায়ক তারেক রহমানকে বাংলার মাটিতে এনে বিচার করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়ন-অগ্রগতির বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। সব ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতাকে উপড়ে ফেলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দূরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। একাত্তরের যারা সংশয়ে ছিলো বাংলাদেশে রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি না, বাংলাদেশ সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে কি না; তারা আজ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখে।

যেভাবে স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো একইভাবে এখনো উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় একাত্তরের প্রেতাত্মারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে মন্তব্য করে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, স্বাধীনতার এ ৫০ বছরে স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের একটি বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

বিজয়ের এই ক্ষণে সব অপশক্তিকে রুখে দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথের কথা জানান আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আজকে এই বিজয় দিবসের শপথ হলো- জাতির পিতা যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তোলা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

এতে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস প্রমুখ।