শ্রীলঙ্কার সংকট বাংলাদেশেও দেখা যেতে পারে: বিএনপি

শ্রীলঙ্কার সংকট বাংলাদেশেও দেখা যেতে পারে: বিএনপি

অর্থ পাচারে আওয়ামী লীগের লোকদের জড়িত থাকার বিষয়টি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে বলে দাবি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। সত্য স্বীকার করায় ক্ষমতাসীন দলের ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার বিকালে ঠাকুরগাঁও সদরের বাসুদেবপুর এলাকায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপির নিহত দুই কর্মীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁকে ধন্যবাদ জানান ফখরুল।

গতকাল বৃহস্পতিবার ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগে থেকেও কোটি কোটি টাকা পাচার করে, এরা কারা? এদের চিহ্নিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি সত্যি কথাটি উচ্চারণ করেছেন, তাঁর দলের লোকেরা যে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে, লুট করেছে। এই লোকগুলো তাঁদের দলে আছে। তারা তাঁদের সম্মেলনে এ লোকগুলোকে বাদ দিতে চান। এটা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে যে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও তাঁদের দলের লোকেরা বাংলাদেশকে লুট করছে। আর লুট করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অর্থনীতিতে পরিণত করছে।’

২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঠাকুরগাঁও সদরের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর এলাকায় বিএনপির দুই কর্মী প্রাণ হারান। মির্জা ফখরুল বলেন, ওই নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে জনগণ বর্জন করেছিল। জোর করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল সরকার। তখন এ এলাকায় (ঠাকুরগাঁওয়ের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খারুয়াবাড়ি) জনগণের প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। সেই প্রতিরোধের মুখে পুলিশের গুলিতে এখানে দুজন নিহত হন ও একজন তাঁর হাত হারান। বিএনপি সব সময়ই এই পরিবারেরগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করে।

মির্জা ফখরুলের ভাষ্য, বলপ্রয়োগের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা আবার ক্ষমতায় যেতে চায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪ জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাননি। তাঁরা জোর করে ভোট আয়োজনের চেষ্টা করায়, কোথাও কোথাও প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। সেই প্রতিরোধে অনেকেই শহীদ হন।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে চাইলে এই সরকারের পদত্যাগ চান বিএনপির মহাসচিব। তাঁর ভাষ্য, এ দেশে নির্বাচন হতে হবে জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ জনগণ যেন তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয় না। দৃঢ়তার সঙ্গে ফখরুল বলেন, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। যাতে জনগণের প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন।

সম্প্রতি সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম, এটাই আমাদের ব্যর্থতা। বিশ্বাস করা ভুল হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে মহাসচিব বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই একজন বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করার কারণই হলো, তিনি ব্যবসায়ীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আজ দেশে নিত্যপণ্যের যে মূল্য বৃদ্ধি এখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদে ও তাদের প্রটেকশনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তাদের দলের লোকজনের সিন্ডিকেটই এই নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী। নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির দায় নিয়ে শুধু বাণিজ্যমন্ত্রী নয়, সরকারেরও পদত্যাগ করা উচিত।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শ্রীলঙ্কার নজিরবিহীন সংকট বাংলাদেশেও অচিরেই দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বাংলাদেশেও শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হতে বাধ্য। কারণ, এখানেও একইভাবে অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশে এত বেশি ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে, যা মাথাপিছু ৪৭২ ডলারে করে পড়ে গেছে। এখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাবে। তখন মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হবে।

এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি নুর করিম, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ, জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবুনুর, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েসসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।