খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ফাইল আটকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে : মির্জা আলমগীর

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ফাইল আটকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে : মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ২৮ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আটকে থাকায় তার চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “আমরা যতদূর শুনেছি, কারা কর্তৃপক্ষ অন্যান্য চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে বেগম খালেদা জিয়াকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করার জন্য রিকমেন্ড করেছেন।

“আমরা শুনেছি যে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ফাইল পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এবং এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণে প্রতিদিন দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।”

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারান্তরীন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। বিপরীতে তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠনের কথা তুলে ধরে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গত ২২ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে, যেখানে বেগম খালেদা জিয়া ভালো চিকিৎসা হবে, সেখানে তার চিকিৎসা হবে। ওই সময়ে আইজি প্রিজন্সও উপস্থিত ছিলেন। আজকে ২৮ এপ্রিল, এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

“সরকারের অবহেলা কিংবা সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব কোনো মানবিক আচরণ হতে পারে না। এটা সম্ভবত অপরাজনৈতিক আচরণ।”

মির্জা আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “সরকারকে জোরের সঙ্গে বলব, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় সকল দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে বহন করতে হবে।”

কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব।

নিউরো মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান বলেন, “এখন বেগম খালেদা জিয়ার বেশি সমস্যা ঘাঁড়ের সমস্যা। সবসময় ব্যথা হচ্ছে। এছাড়া হাতের আঙুলগুলোতে রিউমারাইটিস আর্থরাইটিস আছে, আঙুলগুলো ফোলা ফোলা, ব্যথা রয়েছে। উনার কোমরের হাড়গুলো ক্ষয় হয়ে স্পাইনাল কর্ডগুলো চাপা পড়ে গেছে। ফলে তিনি এখন হাঁটতে পারছেন না।

“এসব সমস্যায় শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে, প্যারালাইসিস হতে পারে, হাত-পা অবশ হয়ে যেতে পারে। তার এখন সুচিকিৎসা দরকার, তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার, তার ফিজিওথেরাপি দরকার।”

অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ওয়েল ভেন্টিলেটেড এনভায়রনমেন্টের একটা কক্ষ ও পরিবেশ দরকার। ওই স্যাঁতস্যাঁতে পুরনো কক্ষে থাকলে তার সমস্যাগুলো আরও বাড়তে থাকবে।”

চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “ম্যাডাম চোখের নানা সমস্যায় ভুগছেন। তার চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে। এখন উনার যে অবস্থা উনি যদি চিকিৎসা না পান। একবার যদি কর্নিয়া ড্রাই হয়ে যায়, তাহলে উনার এই কর্নিয়াকে ১৫ বছরেও ভালো করা যাবে না। যে কোনো সময়ে উনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।”

ফখরুল বলেন, “ওয়ান-ইলেভেনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেলে থাকাকালে চোখের সমস্যার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তার পছন্দের স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, পরে বিদেশেও পাঠানো হয়েছিল।

“অথচ তিন বারের প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে তার অবস্থার অবনতি ঘটানো হচ্ছে। এই অনির্বাচিত সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অসুস্থ রাখা, যাতে তাকে রাজনীতি ও নির্বাচনের বাইরে রাখা যায়।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১৪২০ঘ)