রংপুরে বিএনপির সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল

রংপুরে বিএনপির সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল

আজ রংপুরে চতুর্থ বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি। শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে সমাবেশ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। বাস বন্ধ তা নিয়েও বিচলিত নন দলটির নেতাকর্মীরা। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সড়কপথে সারা দেশের সঙ্গে শুক্রবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিভাগীয় শহর রংপুর। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রংপুরসহ আশপাশের জেলার সাধারণ মানুষ। যান চলাচল বন্ধ থাকলেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা ট্রেনে চড়ে, অটোরিকশায় করে, মোটরসাইকেল নিয়ে, কেউবা হেঁটে এসেছেন সমাবেশস্থলে। কেউ কেউ এসেছেন বৃহস্পতিবার রাতেই। বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই এসেছেন শুক্রবার। সঙ্গে চিড়া-মুড়ি নিয়ে এসেছেন কেউ কেউ। শুক্রবার রাতে বস্তা, কম্বল ও চাদর নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিতে দেখা যায় নেতা-কর্মীদের।

রংপুর কালেক্টর ঈদগাহ মাঠে দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে মঞ্চ তৈরি করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ইতোমধ্যেই নগরীতে পৌঁছেছেন। সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে।

সমাবেশের এক দিন আগে শুক্রবার সকাল থেকে রংপুর ও সারাদেশের মধ্যে বাস যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও আশপাশের ৮টি জেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের মাইক্রো বাস, অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার ও মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহনে করে নগর সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় আসতে দেখা গেছে।

এর আগে ময়মনসিংহ ও খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। চট্টগ্রামে সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে পথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধা দেওয়া হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, গণসমাবেশ বানচাল করতেই এই ‘অপকৌশল’ নেওয়া হয়েছে। শনিবার রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দুই দিন আগেই মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধসহ কয়েকটি দাবিতে রংপুর জেলা বাস মালিক সমিতি পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়।

শুক্রবার রাত আটটার দিকে রংপুর নগরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, দূর-দূরান্তের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসছেন। তাদের অনেকে বিকেল থেকে মাঠে অবস্থান নেন।

কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সমাবেশস্থলের মাঠে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব (দুলু), সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী প্রমুখ।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যক্তিদের শহরের উত্তম এলাকার গুদাম, স্কুলঘর এবং রবার্টসনগঞ্জ স্কুল ও মাঠে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে খিচুড়ি-সবজি রান্না করা হচ্ছে। পাশাপাশি মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে পাটের বস্তা, কম্বল ও চাদর সরবরাহ করা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এসে সমাবেশস্থল কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। প্রস্তুত হয়ে গেছে সমাবেশস্থলের মঞ্চও। বিকেল পাঁচটার দিকে নগরের জুম্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে হাজারো নেতা-কর্মী অবস্থান নিয়েছেন। জুম্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কথা হয় হাতীবান্ধা উপজেলার সজীবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে ৩০০ জন রিকশাভ্যানে করে গত রাতে এসেছি। চিড়া-মুড়ি খেয়ে আছি।’

এ সময় আলাপকালে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, শনিবার তাদের ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্ভাব্য বাধা ও হয়রানি এড়াতে তারা রংপুর শহর ও এর আশপাশের এলাকায় আগাম অবস্থান নিয়েছেন।

শুক্রবার ঢাকা থেকে মাত্র কয়েকটি বাস রংপুরে এলেও সকাল থেকে কোনো বাস রংপুর বাস টার্মিনাল থেকে কোনো গন্তব্যে ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ধর্মঘটের কারণে রংপুরগামী আন্তঃজেলা বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে অন্য জেলার বাসগুলো রংপুরে প্রবেশ করতে পারেনি।

মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি।

তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন অভিযোগ করেছেন, তাদের দলীয় সমাবেশে লোকজন যাতে আসতে না পারে সেজন্যই এই ধর্মঘট জারি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পরিবহন ধর্মঘট ও ক্ষমতাসীন দলের তৈরি করা অন্য সব বাধা উপেক্ষা করে রংপুর বিভাগের আটটি জেলার লাখ লাখ মানুষ শনিবার তাদের কর্মসূচিতে অংশ নেবে।

গত সপ্তাহে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেও একই ধরনের হরতাল কার্যকর করা হয়েছিল, তবে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বাধা অতিক্রম করে কর্মসূচিতে অংশ নেন।

বিএনপি তার চলমান আন্দোলনের গতি অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে ২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

আয়োজকরা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির নিন্দা, ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও যশোরে পুলিশের দ্বারা পাঁচ দলের নেতাকর্মীর মৃত্যু এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতেই এই সমাবেশ।

বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরে দাবি করে আসছিল যে আগামী সাধারণ নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা বর্তমান সংবিধানে সে সুযোগ নেই বলে প্রত্যাখান করে আসছে।

শনিবারের সমাবেশটি হবে বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির চতুর্থ সমাবেশ। এর আগে প্রথমটি চট্টগ্রামে, দ্বিতীয়টি ময়মনসিংহে এবং তৃতীয়টি খুলনায় করেছে দলটি।

২০২৩ সালের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সমর্থন জোগাতে অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও অনুরূপ সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে বিএনপি।

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীতে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করবে বিএনপি।