সময় থাকতে মানে মানে কেটে পড়ুন: সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

সময় থাকতে মানে মানে কেটে পড়ুন: সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সময় থাকতে মানে মানে কেটে পড়ুন। নইলে মানুষ আপনাদের বিদায় করবে। আজ বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিশাল সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, একটা গান আছে ‘আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় পা দিতাম না।’ দেশের মানুষ এখন এই গান গাইতে শুরু করেছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের সব অর্জন ধ্বংস করেছে। নষ্ট করে দিয়েছে সব স্বপ্ন। যেদিকে তাকাবেন খালি চুরি আর চুরি। দেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগের বিদায় দেখতে চায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, রিজার্ভ চিবিয়ে খেয়েছি নাকি। হ্যা আপনারা রিজার্ভ চিবিয়ে খেয়েছেন। দেশটাকে ফোকলা করে দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজ মানুষের কোনো আয় নেই। অথচ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আয় আছে। চাঁদাবাজি, দলীয়করণ করে তারা আয় করছেন। লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে তারা শূন্য করে ফেলছেন। মানুষের কিছু না হলেও তাদের স্বাস্থ্য বেড়েছে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) জোর করে দুবার নির্বাচন করেছে। ২০১৪ সালে কেউ ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি। ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৮ সালে তো আগের রাতে ভোট শেষ হয়ে গেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। সংসদ ভেঙে দেয়ার আগে কোনো নির্বাচন হবে না। এটা আমাদের পরিস্কার কথা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার আবারও ২০১৪-১৮ সালের মতো নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। তারপর পাতানো নির্বাচনে জিতে আবারও যেমন খুশি তেমন চুরি করবে।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের চুরির কথা বলতে গেলে দিনরাত পার হয়ে যাবে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তারা বিদেশে পাচার করেছে। তারা আমাদেরকে ভাতে মারছে, পানিতে মারছে, কর্মসংস্থানে মারছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আরও দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে বাধ্য করা হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম ওরফে নয়ন মিয়ার হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নয়নকে বিনা কারণে কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশের লিফলেট বিলি করার কারণে হত্যা করা হয়েছে। আজকের সমাবেশে তার (নয়নের) বাবার চোখে যে আগুন দেখতে পেয়েছি, তা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের চোখেও জ্বলছে।’

তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে এই সরকারের দুঃশাসনে গোটা দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। তারা এর থেকে মুক্তি চায়।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাস করেছেন আপনারা। ছাত্রলীগের ছেলেদের দিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন দেওয়া হয়।’ গুম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লাকসামের বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হীরু, হুমায়ুন কবির পারভেজের সন্তানেরা তাদের বাবাকে ৯ বছর ধরে খুঁজছে। বাচ্চাগুলোকে এতিম করেছেন। আওয়ামী লীগের চুরির কথা বলতে গেলে রাত পার হয়ে যাবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, নয়নকে প্রচারপত্র বিতরণকালে পুলিশ সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের চোখে আমি আগুন দেখছি। প্রতিটি মানুষের চোখে এখন আগুন দেখছি।

মির্জা আব্বাস বলেন, শেখ হাসিনা সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা বিএনপির সমাবেশের জবাব দিতে চায়। তারা যশোরে সমাবেশ করেছে। আজকের এই সমাবেশ আওয়ামী লীগের সকল সমাবেশের জবাব দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কদিন আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের একটা সমাবেশ হয়েছে। কর্মীরা দেওয়াল টপকে বের হয়ে গেছে। আমাদের কর্মীরা কখনও দেওয়াল টপকে বের হয়ে যায়নি। আমাদের নেতাকর্মীরা যে কোনো পরিস্থিতি ট্যাকেল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তারা কোনো ভয় পায় না। রক্ত চক্ষু নিয়ে সরকারের বাধা মোকাবিলা করে আসছে।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ইসলামী ব্যাংকের টাকার লুট করে নিয়ে গেছেন। কীভাবে দুর্ভিক্ষ বাঁচাবেন। টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার দেশের জনগণ প্রস্তুত হয়ে গেছে। এই দৈত্যকে সরাতে হবে। যতদিন তারা ক্ষমতায় থাকবে, ততদিনে দেশের মানুষের সব খেয়ে ফেলবে।

আমরা ক্ষমতায় এলে কুমিল্লা নামেই বিভাগ প্রতিষ্ঠা করব জানিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এই দেশের জনগণ এই সরকারকে আর দেখতে চায় না। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে এই সরকারের বিদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করব। আপনারা এই সরকারকে বিদায় করতে প্রস্তুত থাকবেন। এই সরকারের সময় শেষ। তারাও বুঝতে পারছে, আগমী দিনে বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ।

ড. মোশাররফ বলেন, আজকে যারা সরকারে আছে, তারা বিনাভোটে সরকারে আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। গত ১৪ বছরে শুধু সংসদই নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও জনগণ ভোট দিতে পারেনি। সারা দেশে ৬০০ গুম, ১০০০ বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আজকে সমাবেশে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ এর বেশি মামলা করেছে, যাতে সমাবেশ সফল করতে না পারি। সরকারের লুটপাটের কারণে ২০ শতাংশ সীমা থেকে ৪০ শতাংশে উঠে গেছে।

খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, বিচার বিভাগকে এই সরকার ধ্বংস করেছে। তারা গায়ের জোড়ে ক্ষমতায় টিকে আছে। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এটা বাংলাদেশের জন্য হুমকি। এই সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপির এই সমাবেশ সরকারের হৃদকম্পন বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের ছোট ভাই নয়নকে খুন করেছে। নয়নের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। তার রক্তের বদলা হিসেবে দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করে ছাড়ব। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো।

নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের কৃষক শ্রমিক আজ ভালো নেই। পত্রিকায় আসছে সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বেশি। জিনিসের দাম কমে না। দাম বাড়ায় প্রতিবাদ করতে গেলেই গুলি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারে। বিএনপির সমাবেশে আসতে দিবে না। তাই বাধা দেয়। তারা দুর্নীতি করে।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। তখন দেখা যাবে জনগণ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে পছন্দ করে কিনা? এখন চাপা মারতেছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আপনারা (আওয়ামী লীগ) একজনও জিতবেন না।

বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, আমরা ১৪ বছর বীভৎস সময় পার করেছি। আমরা ভোট দিতে পারিনি। আমাদের নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর না। আপনারা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার দিকে তাকান। বিএনপির গণসমাবেশ লোকে লোকারণ্য। এই ভালোবাসা বিএনপির প্রতি ভালোবাসা। তারেক রহমানের প্রতি ভালোবাসা। ২০১৪ সালের মতো আর ভোট হবে না। আগামী ২০২৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হবে। ইভিএম এ ভোট হবে না। ভোট হবে ব্যালটে।

পুলিশের উদ্দেশে রুমিন ফারহানা বলেন, পুলিশের লোকদের বলছি আপনারা জনগণের দিকে বন্দুক তাক করিয়েন না। র‌্যাব তাক করেছিল, র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ‌আগামী জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হবে না, হতে দেওয়া হবে না।

মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেছেন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়াকে পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এই পুলিশ বাহিনী কি ভুলে গেছে? তাদের বেতনের টাকা আসে কোথা থেকে? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন হয়। সেই পুলিশ বাহিনী নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে।

আফরোজা আব্বাস বলেন, আপনাদের বলছি, এখনো সময় আছে আপনারা সতর্ক হোন। আপনাদের বন্দুকের নিশানা ঘুরিয়ে দেন। অন্যায়ের দিকে ঘুরিয়ে দিন। জনগণের কাতারে দাঁড়ান। ১৮ কোটি মানুষের দিকে দাঁড়িয়ে আমাদের সাথে স্লোগান দেন, হটাও মাফিয়া, বাঁচাও দেশ, টেক ব্যাক বাংলাদেশ।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াসিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে তিনি ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।