সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আলমগীর

‘সিইসিকে ফোন দিলে বলে, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন’

‘সিইসিকে ফোন দিলে বলে, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন’

ঢাকা, ১৫ মে (জাস্ট নিউজ) : বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। নইলে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। আজ খুলনায় সেনা মোতায়েন থাকলে ফলাফল যাই হোক ভোট ব্যবস্থা এমন হতো না। বিরোধী দল সুন্দরভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারত।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আলমগীর এসব কথা বলেন। এর আগে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে সেখানে বৈঠক করেন তিনি।

বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতার কারণে পুলিশের হামলার মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল বিএনপির কর্মীদের দাঁড়াতে দেয়নি। বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেরাই নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে।

মির্জা আলমগীর বলেন, গণমাধ্যমকে সরকার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। সেটা প্রমাণ হয়েছে যখন আমরা ওখান থেকে খবর পাচ্ছি এক ধরনের, সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে এক ধরনের এবং অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রচার হয়েছে আবার ভিন্নভাবে। আসলে তারা আসল ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচার করতে দেয়নি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আজ যখন সংবাদ এলো ১টার পর একের পর এক কেন্দ্র দখল হয়েছে। তখন সিইসিকে (প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা) ফোন করি। বলি খুলনা নির্বাচনে অনিয়মের কথা। তিনি আমাকে বলেন, ‘আপনারা রাজনৈতিক দল দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন। কোথাও কোনো অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি।’ আমি বললাম, আমি আপনাকে সোর্স বলছি। তখন সিইসি নুরুল হুদা বলেন, ‘কোনো টিভি চ্যানেলে দেখায়নি।’ তখন আমি সংবাদ মাধ্যমগুলোর নাম বললে তিনি বলেন, ‘আমি দেখছি।’ এখনো তিনি দেখছেন। এর আগে গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে আবদুল্লাহ আল নোমানকে (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) আটকের বিষয়ে জানালে তিনি তখনো বলেছেন, আমি দেখছি। তিনি শুধুই দেখছেন।”

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকার পুলিশকে বিরোধী দলের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে বিরোধী দলের ওপর চড়াও হয়েছে। এটা কখনো একটা জাতির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। কিন্তু এখন দেখি পুলিশ নিজেরা উদ্যোগী হয়ে একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলকে প্রটেক্ট করছে।

মির্জা আলমগীর বলেন, যারা নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে তারাই ক্ষমতায় এসে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করেছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছে যাতে একদলীয় ভোট করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের যে দোহাই দেওয়া হয় সেখানেও বলা ছিল, জাতির স্বার্থে দুটি নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার। কিন্তু সেটিও তারা মানেনি। সরকার পুরোপুরি নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। এমনকি সাবেক সিইসি শামসুল হুদা ও কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়।

মির্জা আলমগীর বলেন, দেশে এখন একটা ফ্যাসিবাদ চলছে, কোনো স্বাভাবিক অবস্থা নেই। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাধীনভাবে চালাতে পারছে না। বারবারই আমরা সরকারকে বলছি, আসুন আলোচনা করুন, কীভাবে একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায় সেটির পথ বের করি। কিন্তু সরকার এসবে কর্ণপাত করছে না। গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে আছে। কিন্তু সাময়িক এভাবে থাকা গেলেও বেশিদিন এভাবে ক্ষমতা দখল করে থাকা যায় না।

কারান্তরীণ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে মহাসচিব বলেন, তিনি অনেক বেশি অসুস্থ। কিন্তু সরকার এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা বার বার সরকারকে বলছি, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তাকে মুক্তি দিন।

মির্জা আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। কারণ দেশের প্রধান নেত্রীকে মুক্তি না দিলে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? তাই নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হলে আগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। না হলে কোনো অবস্থাতেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব না।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও আবদুল আউয়াল মিন্টু।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১৫৬ঘ.)