গণঅধিকারের কার্যালয়ে ভাঙচুরের মামলায় বিন ইয়ামিন গ্রেপ্তার: গোয়েন্দা পুলিশ

গণঅধিকারের কার্যালয়ে ভাঙচুরের মামলায় বিন ইয়ামিন গ্রেপ্তার: গোয়েন্দা পুলিশ

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। বর্তমানে তিনি গোয়েন্দা হেফাজতে রয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে বিন ইয়ামিনকে আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে নুরুল হক নুরের হাতিরঝিলের বাসা থেকে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাকে মিন্টুরোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে আসে। এর আগে বিন ইয়ামিনের বাবা পাথর ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলামকে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে আসে বলে অভিযোগ করেন তার পরিবার।

এ বিষয়ে বিন ইয়ামিন এর বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাত পৌনে ৯টায় মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে এশা নামাজ পড়তে মসজিদে প্রবেশ করবো এমন সময় একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলা হয় আপনি তো পাথরের ব্যবসা করেন। পাথর আছে কি? আপনার কাছ থেকে আমরা পাথর কিনতে চাই। এ সময় আমাকে জাপান সিটি গার্ডেনের সামনে আসতে বলা হয়। আসার সঙ্গে সঙ্গে সাদা পোশাকে ৭-৮ জন গোয়েন্দা পুলিশ আমাকে ঘিরে ফেলে। পরে নিজেদের পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনার সঙ্গে আমরা মিথ্যা বলেছি। আমরা গোয়েন্দা পুলিশ।

 

আমাদের সঙ্গে আপনার গোয়েন্দা কার্যালয়ে যেতে হবে। আমাদের স্যার আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর জামান টাওয়ারে তাদের নিজস্ব কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

এ সময় অফিসের নিচে গাড়ি থামিয়ে তারা বিন ইয়ামিনকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে আমাকে হাতিরঝিল এর মহানগর আবাসিক এলাকায় নিয়ে যায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বাসায়। ওখানে প্রায় ২ ঘণ্টা তাদের গাড়িতে বসিয়ে রেখে বিন ইয়ামিন এর লোকেশন ট্রাক করে না পেয়ে আমাকে পুনরায় মোহাম্মদপুর এর বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় দীর্ঘসময় ধরে খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে আবার আমাকে নুর এর হাতিরঝিল এর বাসায় নিয়ে আসে। বাসার নিচে গাড়িতে বসিয়ে রেখে তারা ১৫-২০ জন গোয়েন্দা পুলিশ নুরের বাসার প্রবেশ করেন। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং পুলিশের গাড়ি আসতে দেখা যায়।

দীর্ঘসময় পর তারা বিন ইয়ামিনকে সঙ্গে করে নিচে নামেন এবং একই গাড়িতে আমার সঙ্গে বসায়। এ সময় নাজমুল নামে আরেক ছাত্র নেতাকে ডিবির অন্য একটি গাড়িতে করে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে আসে। তখন রাত প্রায় পৌনে ৪টায় মিন্টুরোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে আসার পর নাজমুল এবং বিন ইয়ামিনকে দুটি আলাদা কক্ষে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে গোয়েন্দা পুলিশ এর সদস্যরা বলেন, আঙ্কেল আপনাকে এবং নাজমুলকে আমরা বাসায় রেখে আসবো। আমাদের সঙ্গে চলেন। বিন ইয়ামিন ডিসি স্যারের কক্ষে আছেন। ওর সঙ্গে স্যার কথা বলবেন। বুধবার বিন ইয়ামিনকে কোর্টে তোলা হবে। এরপর ভোর ৪টায় আমাকে মোহাম্মদপুর এর বাসায় পৌঁছে দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। বিন ইয়ামিনের বাবা বলেন, কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হলো জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কিন্তু ঘটনার সময় বিন ইয়ামিন সেখানে উপস্থিত ছিল না। আমার নিরপরাধ ছেলেকে কেন তারা এভাবে নিয়ে আসলো জানি না। এখন আমি এবং বিন ইয়ামিন এর মা গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছি। এ সময় ছেলের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন তিনি।

এদিকে মধ্যরাতে নুরের বাসায় ডিবি’র অভিযানের ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তার বাসায় মঙ্গলবার রাত ২টায় অভিযান চালিয়েছে ডিবি পুলিশ। এমনটিই অভিযোগ করেছে গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা। নুর জানায়, বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযান শেষে বাসার সিসি ক্যামেরা ও হার্ডডিস্ক নিয়ে যায় ডিবি। এর আগে রাত ১০টার দিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানকে সাদা পোশাকে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়।

একই সময়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লার বাবাকে ও তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকে এমনটাই অভিযোগ করেন নুর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ মানবজমিনক বলেন, গত ২১শে জুলাই গণ অধিকার পরিষদের কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা হয়। রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের অপর অংশের নেতা কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এই মামলায় বিন ইয়ামিন মোল্লাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাই। ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা বিন ইয়ামিন বর্তমানে আমাদের হেফাজতে রয়েছে। প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আজ আদালতে তোলা হতে পারে।

রিমান্ড চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নুরের বাসার দরজা ভাঙার বিষয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, নুরুল হক নুর আমাদের প্রচণ্ড অসহযোগিতা করেছে। প্রথমে দরজা খুলে মুখের ওপর আবার দরজা বন্ধ করে দেয়। এবং পুলিশকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। গোয়েন্দা সদস্যরা প্রথমে খুব ভালোভাবে তাকে বলেন, আপনার বাসায় বিন ইয়ামিন রয়েছে এ বিষয়ে আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন। কথা বলার এক পর্যায়ে সে লাইভে গিয়ে বলে তার বাসায় পুলিশ হামলা করেছে। এখন পুলিশ তো আসামি ধরতে যাবেই। রাত যতই হোক। এ সময় নুর আমাদের লোকদের খুব গালিগালাজ করে। বিন ইয়ামিন এর বাবাকে ঠিক তুলে আনা হয়নি। বিন ইয়ামিনকে খুঁজে পেতে তার সহযোগিতা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।