খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায় সরকার: বিএনপি মহাসচিব

খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায় সরকার: বিএনপি মহাসচিব

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোনো আপস করবেন না, কোনো শর্ত মেনে তিনি কোথাও যাবেন না। সরকার বলছে বিদেশ যেতে হলে তাকে কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এ ধরনের কথাবার্তার মানে হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে তারা হত্যা করতে চায়।  

বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে পেশাজীবী কনভেনশনে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক পেশাজীবী ঐক্য পরিষদের আয়োজনে এই কনভেনশনে সারাদেশ থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার দেড় সহস্রাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের আন্দোলনে ভীত হয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন ভয় নাই ভয় নাই, তলে তলে আপস হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে স্বীকার করলেন তারা ভয়ে ছিলেন। ওবায়দুল কাদের বললেন, দিল্লি আছে, আমরাও আছি, আমরা আছি, দিল্লি আছে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কী বলতে চেয়েছেন? দিল্লি কি আপনাদের অপকর্মগুলোতে এরই মধ্যে সমর্থন দিয়েছে? আপনাদের জানিয়ে দিয়েছে যে, এবারও একতরফা নির্বাচন করতে থাক? দিল্লি কি বলেছে যে, বাংলাদেশে জোর করে নির্বাচন ঘোষণা কর? যদি বলে থাকে তাহলে সেটাও পরিষ্কার করে বলুন।

নির্বাচন নিয়ে সরকারের তৎপরতার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি তার মানে এই নয় যে, আঘাত করলে প্রত্যাঘাত করব না। আন্দোলনের মাধ্যমে এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের সংসদ তৈরি করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বার্তা পাঠিয়েছেন। গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই, কোনো শর্ত মেনে তিনি কোথাও যাবেন না। ওয়ান ইলেভেনেও বলা হয়েছিল– বিদেশে চলে যেতে। খালেদা জিয়া বলেছেন, এই দেশ ছাড়া কোথাও তার জায়গা নেই। তখন কিন্তু অন্যরা বিদেশে চলে গিয়েছিলেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ৪০১ ধারায় বলা আছে, সরকারের ক্ষমতা আছে সাময়িকভাবে দণ্ড স্থগিত করার, দণ্ড মাফ করে বিদেশে পাঠানোর। অথচ সরকার বেমালুম বলে যাচ্ছে– কোনো সুযোগ নেই। তাকে কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চান বলেই এই ধরনের কথা বলছেন।

লন্ডনে এক নাগরিক সভায় খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তার ওই বক্তব্যকে জনগণ নিকৃষ্টতম ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছে। তিনি তার বক্তব্যে কয়েকটি সত্য কথা বলে দিয়েছেন। তা হলো– এ দেশে যা কিছু ঘটে তা শেখ হাসিনার ইঙ্গিতে ঘটে। খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার স্বীকারোক্তিতে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে এ দেশে বিচার বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই হলো সিদ্ধান্ত। এখন শেখ হাসিনা নিজেকে নিজে সম্রাট ঘোষণা দিলেই পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের গতিপথ চোরাবালিতে হারিয়ে গেছে। সেখান থেকে সবাইকে নিয়ে দেশকে উদ্ধার করতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে এবার কেউ এগিয়ে আসবে না। এমনকি ভারতও তাদের পাশে নাই। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলীর  সভাপতিত্বে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, আইনজীবী ফোরামের কামরুল ইসলাম সজল, শামীমুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, মন্ত্রিপরিষদ সাবেক সচিব আবদুল হালিম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বক্তব্য রাখেন।