নয়াপল্টনে সমাবেশে মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়ার কিছু হলে জনগণ ক্ষমা করবে না

খালেদা জিয়ার কিছু হলে জনগণ ক্ষমা করবে না

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত না করা পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা কেউ ক্ষান্ত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে আগামী ১৪ই অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে তিন ঘণ্টার অনশন করার ঘোষণা দেন তিনি।

গতকাল বিকালে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এই কথা বহুদিন ধরে বলছি। তার পরিবার সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদনই করেননি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন। দেশের মানুষ এত বোকা নয়। তারা বুঝেছে শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া। তাকে যদি আটক রাখা যায় তাহলে তারা (সরকার) অবৈধ শাসন টিকিয়ে রাখতে পারবে। আজকে তাই তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চায়। দেশের মানুষ পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চায় খালেদা জিয়ার কিছু হলে জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ সকালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত বোর্ডের চিকিৎসকরা পরিষ্কার করে বলেছেন, দেশে যা যা করার দরকার করা হয়েছে সবই করা হয়েছে, এখন তাকে সুস্থ করতে হলে বিদেশে না নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দেশে সহনশীল রাজনীতি সৃষ্টি করেছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম করেছেন। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৬ দিন হরতাল দিয়েছে। আজকে তারা তা মানছেন না। এই আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরা ফ্যাসিস্ট। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়ে বিএনপি’র ১৫ জন নেতাকে ৪ বছর করে সাজা দিয়েছে। গতকাল আরও ১৫ জন সাবেক ছাত্রনেতাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তারা মনে করছে এদের আটক রাখলে বিএনপিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। প্রতিটি সাজার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কর্মী সৃষ্টি হচ্ছে। বিএনপি হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মতো। অনেক সিনিয়র নেতাদের সাজা দিয়ে আটক রেখেছে। এগুলো করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে পারবেন না।

তিনি বলেন, জনগণ জেগে উঠেছে। তারা মরণপণ আন্দোলন শুরু করেছে। এই সরকারকে পরাজিত না করা পর্যন্ত ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত কেউ ক্ষান্ত হবে না।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকারের কাছে এটা আশা করা যায় না। কারণ এটা কোনো মানবিক সরকার নয়। এটা দানবীয় সরকার। তা না হলে বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এমন কথা বলতে পারতেন না। 

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা কারো মুক্তি চাইবো না। আমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করবো এবং এই সরকারকে বিদায় করবো।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকার ভেবেছিল, বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করলে বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে এই সরকার কিছু করতে পারবে না। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে আনবো।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আইনমন্ত্রী নিজেই বেআইনি কথা বলেন। মিথ্যার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। তাকে সুচিকিৎসায় বাধা দেয়া হচ্ছে। তার কিছু হলে এই সরকার আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। 

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে শুধুমাত্র গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়ে কীভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, সেটা আজকে ডাক্তারের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে। আর বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিত ও সুচিন্তিতভাবে হত্যার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভোটাধিকার, নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচনের সংলাপে বিএনপি রাজি আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যাবে না। কারণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয় তাদেরকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। সুতরাং ভোট চোরদের রক্ষা করার জন্য আওয়ামী লীগ সংলাপে যাবে না। 

ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে আমিনুল হক ও লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, এডভোকেট আজম খান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।