আরও কঠোর কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান বিরোধী নেতাকর্মীদের

হাসিনার হুমকি-ধমকিতে আর কাজ হবেনা: তারেক রহমান

হাসিনার হুমকি-ধমকিতে আর কাজ হবেনা: তারেক রহমান

দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার হুমকি-ধমকিতে আর কাজ হবেনা।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিরোধীদলসমূহের চলমান আন্দোলনের মধ্যে সোমবার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেয়া এক বক্তৃতায় এসব কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বক্তৃতায় বিএনপিসহ আন্দোলরত বিরোধী নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে  তারেক রহমান বলেছেন, চলমান  আন্দোলন দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন। সে কারণে দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে। সুতরাং আপনারা প্রত্যেকেই যার যার সাংগঠনিক এলাকা ঘিরে ঘোষিত কর্মসূচিত বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ শুরু করুন। সমন্বয় করে আপনার সাংগঠনিক এলাকায় কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিন। নতুন করে নির্দেশনার প্রয়োজন নেই। একজন গ্রেফতার কিংবা নেতৃত্ব দিতে অপরাগ হলে আপনি নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। নেতৃত্ব নিন, নেতৃত্ব দিন। 

তিনি আরও বলেন, বিশ্বাস রাখুন, এবার আর ফ্যাসিস্ট হাসিনার হুমকি-ধমকিতে কাজ হবেনা। মাফিয়া সরকারের পতন অনিবার্য, ইনশাআল্লাহ।

সরকার পতনের দাবিতে চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সারাদেশে বিভিন্ন মেয়াদে কয়েক দফায় সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অবরোধ পালন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আক্রমণে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। আমি তাদের শোকাহত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই। দাবি আদায়ে গণতন্ত্রকামী জনগণ যেভাবে কষ্ট স্বীকার করছেন, ত্যাগ স্বীকার করছেন, এই কষ্ট, এই ত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া হবেনা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণের এ আন্দোলন ইনশাআল্লাহ অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পুনরায় ১৫ নভেম্বর থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে।

অবরোধ কর্মসূচিতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মাফিয়া সরকার ভেবেছিলো হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করলেই আন্দোলন দমন করে ফেলা যাবে। কিন্তু এবারের আন্দোলন শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আন্দোলন নয়। এবারের আন্দোলনের সৈনিক দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের শ্রমজীবি, কর্মজীবি, পেশাজীবি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। আজ তাই সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে সারাদেশে সফলভাবে অবরোধ কর্মসূচি এগিয়ে চলছে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে হাজার হাজার মানুষ গুম, খুন, অপহরণ, মামলা, হামলা এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে যা বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। দেশে দুর্নীতি, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। দেশে বিরোধীদল সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভসহ নানান কর্মসূচি পালন করলেও গত ১০ বছরে দেশে হরতাল হয়নি, অবরোধ হয়নি। তাহলে জনগণের প্রশ্ন, জনগণ জানতে চায়--তাহলে কেন অধিকাংশ মানুষের দিন কাটে অর্ধাহারে, অনাহারে? কেন প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম? কেন আওয়ামী বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের বাইরে? কেন গার্মেন্টস শ্রমিকদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে? কেন একের পর এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে হচ্ছে? বন্ধ হয়ে যাওয়া গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের সংসার চালানোর জন্য রাষ্ট্র কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে?

তারেক রহমান বলেন, গত এক দশকে দেশে কোন হরতাল বা অবরোধ হয়নি। তাহলে দেশের ব্যাংকগুলো কেন আজ প্রায় দেউলিয়া? বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর কেন বলতে বাধ্য হলেন, তিনি তার ৩৬ বছরের চাকুরি জীবনে এমন অর্থ সংকট কখনো দেখেননি? হাসিনা কেন পুরো দেশটাকে এমন অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া বানিয়ে দিলো? বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন রিজার্ভ লুটেরা চক্র কেন এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে? কেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে ১১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশী পাচার করে দেওয়া হয়েছে? কারা করেছে? কেন দেশে মেগা প্রজেক্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি, লুটপাট চলছে? 

তিনি বলেন, কুইক রেন্টালের নামে পরিবার ও দলের দুর্নীতিবাজদের স্বার্থে কেন দুর্নীতির হাট বসানো হলো? কুইক রেন্টালের নামে কেন শত শত কোটি টাকা লুটপাটের পর জনগণের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি? উন্নয়নের নামে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বর্তমান প্রজন্ম তো বটেই কেন ভবিষ্যত প্রজন্মকে ঋণের চক্রে, জালে আবদ্ধ করে ফেলেছে? কেন লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত তরুণ, তরুণি আজ বেকার? তাহলে কিসের উন্নয়ন? আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে কেন বাংলাদেশে কর্মরত কূটনীতিকদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে? কেন, কার স্বার্থে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে? কেন বাংলাদেশে জনগণের ভোটের অধিকারকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে? 

যতদিন বিনাভোটে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবেনা বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। 

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা না গেলে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা যাবেনা। বাঁচানো যাবেনা কৃষককে, বাঁচানো যাবেনা শ্রমিককে, দিনমজুর বাঁচবেনা এবং স্বল্প আয়ের মানুষের দুঃখ-কষ্ট ঘুচানো যাবেনা। সুতরাং নিজে বাঁচতে চাইলে, নিজের পরিবারকে বাঁচাতে চাইলে, আসুন আমরা সকলে আরও ঐক্যবদ্ধ হই। 

তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিটি পরিবার থেকে প্রতিরোধ গড়ে উঠলে মাফিয়া চক্র অচিরেই জনগণের কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হবে।