ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে লেরি কার্ডলো

‘সমাজতন্ত্র সমৃদ্ধি নয়, দারিদ্রতা ডেকে আনে’

‘সমাজতন্ত্র সমৃদ্ধি নয়, দারিদ্রতা ডেকে আনে’ Photo credit: Cheriss May/NPC

ওয়াশিংটন থেকে বিশেষ সংবাদদাতা

সমাজতন্ত্রের কড়া সমালোচনা করে ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ নীতিনির্ধারক লেরি কার্ডলো বলেছেন, “সমাজতন্ত্র পরাজিত। এ মতবাদ দারিদ্রতার মূল কারণ।”

মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেসক্লাবের হ্যাডলাইনারস লাঞ্চনে যোগ দিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন একসময়কার সাড়া জাগানো ব্রডকাস্টার বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা লেরি কার্ডলো।

১০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন সাংবাদিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেসক্লাবের ১১২তম প্রেসিডেন্ট এলিসন ফিজারল্যাড কোজাকের সঞ্চালনায় পোডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন এ্যানড্রিয়া এন্ডি, মুশফিকুল ফজল আনসারী, মার্ক সেফ, এ্যামান্ডা ম্যাসিয়াস, সুজান ভার্গা, ডোনা লেগার, কেভিন ওয়েনসিং, কিম্বারলি অ্যাডামস, মার্ক হ্যামরিক, ইমেল একন এবং ফ্রাঙ্ক ইসলাম।

অনুষ্ঠানে কার্ডলো বলেন, “আমি এক সময় ডেমোক্রেটদের কাতারে ছিলাম।”

“সত্যি বলতে কী, প্রেসিডেন্ট-রোনাল্ড রিগ্যান ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’জনই একসময় ডেমোক্রেট ছিলেন।দুই জনের সাথেই আমার কাজের অভিজ্ঞতা আছে।”

লেরি কার্ডলো বলেন, “সমাজতন্ত্র পরাস্থ হয়েছে।আমি চাইনা অতীতে যে শিক্ষা হয়েছে তা কেউ ভুলে যাক।”

তিনি বলেন, “সামষ্টিকবাদ, কেন্দ্র পরিক্ল্পনা আর সরকার কর্তৃক পরিচালিত অর্থনীতির সবকটি প্রয়োগই ইতিহাসে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।”

“তারা আমাদের কাঠামাগোত অবস্থাটা দীর্ঘ মেয়াদে দুর্বল করে দিয়েছিলো, স্বাধীনতা খর্ব করেছিলো, কার্যত তারা চেয়েছিলো রাজনীতির জটিল ঘূর্ণাবর্তে নিয়ে যেতে।”

কার্ডলো এমন এক সময়ে বিষয়টা নিয়ে কথা বললেন যখন ডেমোক্রেটরা সবার জন্য চিকিৎসা আর গ্রীণ নিউ ডীল ইস্যুতে সরব। আর এ ইস্যু ডেমোক্রেটদের কড়া সমালোচনা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারা এটিকে ডেমোক্রেটদের বাম এবং চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়া হিসেবে দেখছে।



কার্ডলো বলেন, “একজন অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে আমি বলবো সেটা সমাজতন্ত্র সমৃদ্ধি আনেনা, বরং দারিদ্রতাকে ডেকে নিয়ে আসে।”

তিনি বলেন, “সমৃদ্ধির এক নতুন বাঁকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বিশ্বের সবচাইতে সমৃদ্ধ অর্থনীতি আমাদের। আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। আমরা এমন নীতি গ্রহণ করার দিকে কেনাে এগুবো যার ফলে ১০ বছরে জিডিপ কমে দাঁড়াবে ১৫ শতাংশে?”

কার্ডলো ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। সুদের হার কমানোর বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে অবস্থান নিয়েছেন তিনি সেটাকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, “ফেডারেল রিজার্ভের টার্গেট রেট কমানোর বিষয়ে ট্রাম্প যেটা বিশ্বাস করেন আমি তা সমর্থন করি।”

ফেডারেলের দ্বৈত ম্যান্ডেটের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জানেন কী না এমন প্রশ্নে কার্ডলো বলেন-অবশ্যই। এসময় তিনি প্রেসিডেন্টের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

অভিবাসী ইস্যুতে নিজের পূর্বের অভিমতের পরিবর্তন হয়েছে বলেও জানান এই অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।



নিজে একসময় ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির সমালোচনা করলেও বর্তমান অবস্থান তোলে ধরে বলেন, “এটা (অভিবাসী) নিয়ে আমাদের শুরুর অবস্থানটা ঠিক ছিলো।এটা নিয়ে অনেক অসত্যতথ্য এবং গুজব ছড়ানো হয়েছে।আমরা যা শুনতাম সেটা ছিলো ভুল।এটা হতেই পারে।”

তিনি বলেন, “যতো আমরা জেনেছি, তত আমাদের ধারণা পাল্টেছে। আমি মনে করি অভিবাসন বিষয়টা নিয়ে প্রেসিডেন্ট খুবি ভালো ধারণা রাখেন। একসময় আমরা সেটা অনুধাবন করতেপারি।”

যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সমঝোতা নিয়ে বুঝাপড়ায় অগ্রগতি হচ্ছে বলে জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিষয়ক শীর্ষ ওই উপদেষ্টা। দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে চুক্তির বিষয়ে আশার সতর্ক ঝিলিক দেখছেন তিনি।

তিনি বলেন, “দুই দেশের মধ্যে এমন অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। চলমান সংলাপে কার্যকর প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে এগুলো নিয়ে দ্বিপাক্ষিক মতবিনিময় হচ্ছে।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ অর্থনৈতিক কর্মকর্তা বলেন, “(বাণিজ্য ইস্যুতে) এখন যে জায়গাটাতে দুই দেশ অবস্থান করছে আগে তেমনটা ছিলোনা। প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে যেটা অবাক করে দেবার মতোই কিছু একটা।”

কার্ডলো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বাণিজ্য ইস্যুকে ইতিহাসের স্মরণীয় একটা জায়গায় নিয়ে এসেছি আমরা । যেকোনো সময়ের চাইতে অগ্রসরতা, নিবিড়তা এবং উদারতার জায়গাটুকু বিস্তৃত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের সম্পর্কের ঘনিষ্টতা বেড়েছে, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে কথিত অবকাঠামোগত বিষয় এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের মতো ইস্যুও বাদ যায়নি।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ অর্থনৈতিক কর্মকর্তা বলেন, “মালিকানা আরোপের জায়গাটি আসলেই জটিল। কৃষি এবং শিল্প পণ্যের ক্ষেত্রে বাধাগুলো কমানোর জন্য কাজ হচ্ছে। সব বিষয়ই আলোচনার টেবিলের জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছি আমরা ।”
বাণিজ্য নিয়ে ওয়াশিংটন আর বেইজিং এর মধ্য চলছে দা-কুমড়ো অবস্থা। এক দেশ আরেক দেশের পণ্য রপ্তানির উপর বিলিয়ন ডলার পরিমাণ কর আরোপ করছে।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটা কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে আসতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শিল্প ঘাটতি কমিয়ে কিভাবে চীনের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়গা করে নিতে পারে তা নিয়ে চলছে বুঝাপড়া।

ডিডিও লিংক: https://www.c-span.org/video/?459866-1/larry-kudlow-addresses-national-press-club-washington-dc

জিএস/