যুক্তরাজ্যের বার্ষিক গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ

‘নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হাসিনাকে বার্তা দিয়েছিলো যুক্তরাজ্য, অনিয়ম বিশ্বাসযোগ্য’

‘নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হাসিনাকে বার্তা দিয়েছিলো যুক্তরাজ্য, অনিয়ম বিশ্বাসযোগ্য’

বাংলাদেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ছিলো অনড় এবং স্পষ্ট। আর এ নিয়ে দেশটির এমন দৃঢ় অবস্থানের বার্তাও পৌঁছে দেয়া হয়েছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট স্বয়ং এই বার্তা হাসিনার কাছে পৌঁছে দেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে।

শুধু তাই নয় ২০১৮ সালে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারকে।

বুধবার যুক্তরাজ্যের ২০১৮ সালের বার্ষিক মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক রিপোর্টে বাংলাদেশ অংশে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

নির্বাচন ছাড়াও রিপোর্টে মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রম অবনতি, বিচারবর্হিভূত হত্যা, মতপ্রকাশে বাধাদান, রোহিঙ্গাসংকটসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্য সরকার কর্তৃক প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্টটি অনুবাদ করে জাস্ট নিউজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

রিপোর্টে বলা হয়, “যুক্তরাজ্য চেয়েছিলো বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান ছিলো দৃঢ় এবং অনড়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং সমৃদ্ধির স্বার্থেই এরকম নির্বাচনের প্রয়োজন ছিলো। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট যুক্তরাজ্যের এই বার্তা (নির্বাচন প্রসঙ্গে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছি দিয়েছিলেন।”

রিপোর্টে বলা হয়, “২০১৮ সালের বছর জুড়েই মন্ত্রীবৃন্দ নির্বাচন নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা বার বার বাংলাদেশ সরকার এবং বিরোধীদলগুলোর কাছে তোলে ধরেছিলেন।”

রিপোর্টের শুরুতে বলা হয়, “২০১৮ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশের অবনতি ঘটেছে। দেশটিতে ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হয়েছে তাতে অসংখ্য অনিয়ম আর সহিংস ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উঠে এসেছে। গুম, মতপ্রকাশে বাধাপ্রদান আর আধুনিক দাসত্বপ্রথার মতো বিষয়গুলো মানবাধিকার রিপোর্টে গুরুত্ব পেয়েছে।”

জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়, “নির্বাচনে সবগুলো বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছিলো উৎসাহব্যঞ্জক একটি বিষয়। তবে নির্বাচনী কাজে বাধাপ্রদান, গ্রেফতারকান্ডের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। আর এ কারণেই বিরোধীদলগুলোর নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ন্ত্রিত এবং বাধাগ্রস্থ হয়েছে। নির্বাচনের দিন অনিয়মের কারণে অনেকেই ভোট দিতে পারেননি।”

এতে আরো বলা হয়, “নির্বাচনকেন্দ্রিক সব অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ, বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বচ্ছ একটি সমাধানের আহবান জানাচ্ছে যুক্তরাজ্য।”

মানবাধিকার পরিস্থিত প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়, “বিগত বছরের মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘মাদক বিরোধী যুদ্ধে’ বিচারবর্হিভূত হত্যাকন্ড এবং গুমের মতো ঘটনা ঘটেছে। আর তাতে প্রমাণ হয় যে দেশটিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কোনোরকমের স্বচ্ছতা ছাড়াই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যার কোনো সমাধান এখনো হয়নি।”

আলোচিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়, “অক্টোবরে যখন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাস করা হয় তখন মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি আলাদা করে দৃষ্টিতে আসে যুক্তরাজ্য এবং সুশীল সমাজের। বাংলাদেশ সরকারকে বলা হয়েছিলো আইনটিতে যেনো ব্যক্তি গোপনীয়তা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়টি গুরুত্ব পায় তা নিশ্চিত করতে। কিন্তু সুশীল সমাজ আইনটিতে যা দেখেত পেলেন তা হলো নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা দেবার জন্যই তা পাস করা হয়েছে। বৃটিশ হাইকমিশন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটিতে অন্যায়ভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাতে পরিবর্তন নিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। ডিসেম্বরে তথ্য মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাজ্য মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম এর ২০১৮ সালের সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী অনলাইনে ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্র সম্পর্কে অবমাননাকর তথ্য বা লেখার দায়ে তথ্য এবং যোগাযােগ প্রযুক্তি আইনের আওতায় ২০১৮ সালে ৫৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। একই আইনে খ্যাতিমান আলোকচিত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী শহীদুল আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। শহীদুল আলমের গ্রেফতারের পর তার মামলাটি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীবৃন্দ এবং হাইকমিশনার।”

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়, “ইউএনএইচসিআর মতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বেড়েছে ১৪,৬৪৯ জন। আর তাতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে নয় লাখে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে উদারতার পরিচয় দেখিয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে সংকট শুরু হবার মুহূর্তে কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরের যে পরিবেশ ছিলো এখন তার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।”

জিএসএ/