জাতিসংঘের প্রতিবেদন

সাংবাদিক খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজ সালমান জড়িত

সাংবাদিক খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজ সালমান জড়িত

ওয়াশিংটন থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী

ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত মর্মে বিশ্বাসযোগ্য আলামত পেয়েছে জাতিসংঘ।

বুধবার সংস্থাটির বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

গত বছরের অক্টোবরে খাশোগির সঙ্গে কী ঘটেছে তা নিয়ে আলামত পর্যালোচনার পর ১০০ পৃষ্ঠার একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন ক্যালামার্ড।

প্রতিবেদনে সৌদি যুবরাজকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা উল্লেখ করা হয়।

খাশোগি হত্যাকান্ডকে "আন্তর্জাতিক অপরাধ" আখ্যা দিয়ে ক্যালামার্ড বলেন, "বিশেষ দূত হিসেবে চূড়ান্তভাবে যে বিষয়টি বলবো তা হলো-খাশোগি উদ্দেশ্যমূলক, পূর্ব-পরিকল্পিত এবং বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী সৌদি আরব এর জন্য দায়ী।

সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে খাশোগির শেষ মুহূর্তের কথোপোকথনের রেকর্ডিংগুলো পর্যালোচনা এবং সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বাদানুবাদও তদন্তে উঠে এসেছে। বাদানুবাদের এক পর্যায়ে এক সৌদি কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়: "তোকে ধরতেই আমরা এখানে এসেছি।"

যখন খাশোগিকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছিলেননা তখনি কনস্যুলেটের ভেতর ধস্তাধস্তির শুরু হয়। দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেবার শব্দও শোনা যাচ্ছিলো।এসময়ের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে জাতিসংঘ বিশেষ দূতের প্রতিবেদনে বলা হয়, "তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের রেকর্ড পর্যালোচনা করে যা বুঝা যায় খাশোগিকে প্রথমে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করা হয়। তারপর প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করে তার শ্বাসরোধ করা হয়।"

প্রতিবেদনটিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে সৌদি আরব। এক টুইট বার্তায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর বলেন, "এখানে নতুন কিছুই নেই। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ দূত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন তা স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ।"

জাতিসংঘের বিশেষ দূতের প্রতিবেদনে সৌদি আরবে কীভাবে সমালোচকরা প্রশাসনের রোষানলে পড়ছেন তা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক এবং একাডেমিকদের ফোন কল হ্যাক করতে দেশটি কীভাবে গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক বিস্তৃিত করে রেখেছে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

জামাল খাশোগি হত্যায় কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা বারবারই অস্বীকার করে আসছে সৌদি আরব। তারা এটিকে সন্ত্রাসী ঘটনা বলে চালিয়ে দিয়েছে এবং সিংহাসনের উত্তরাধিকার যুবরাজ এ নিয়ে কিছুই জানেনা বলে দাবি করে আসছে।

জাতিসংঘ দূতের প্রতিবেদনে মূল যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা হলো:

১. সৌদি যুবরাজসহ দেশটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা হত্যাকন্ডে জড়িত থাকার বিশ্বাস যোগ্য আলামত রয়েছে। এ বিষয় নিয়ে অধিকতর তদন্ত করাটা আরো জরুরি হয়ে পড়েছে।

২. খাশোগির মৃত্যুটা ছিলো বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড। তাকে অপহরণ করাটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।

৩. বেআইনী এ হত্যাকান্ড নিয়ে তুরস্ক এবং সৌদি আরব যে তদন্ত চালিয়েছে তা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

৪. হত্যাকান্ড নিয়ে সৌদি আরব যে তদন্ত করেছে তাতে বিশ্বাসের ঘাটতি ছিলো। এটা ন্যায় বিচারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে সৌদি আরবে যে ১১ জনের বিচার চলছে তা বন্ধ করার দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিচারপ্রক্রিয়ার গোপনীয়তা আবলম্বন এবং বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি এর পেছনে উদ্বেগের কারণ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।স্বচ্ছতার ঘাটিত দেখা গেছে।"

এতে বলা হয়, "হত্যাকান্ডের পর জামাল খাশোগির সন্তানদের সৌদি সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে । আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী এ ধরনের ক্ষতিপূরণ কতটুকু সুযোগ আছে তা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, "খাশোগিকে হত্যার প্রায় আট মাস পর যারা এর সাথে জড়িত তাদের অবস্থান এবং কর্মকান্ড রহস্যাবৃত মনে হয়েছে।”

বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক জামাল খাশোগি। তিনি সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত এই সাংবাদিক সৌদি আরবে ফেরার বিষয়ে রিয়াদের চাপ অগ্রাহ্য করে আসছিলেন।

প্রথমে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে খাশোগিকে হত্যার কথা অস্বীকার করা হলেও তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলো সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রমাণ হাজির করতে থাকে। এ ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও ওঠে। এক পর্যায়ে খাশোগি কনস্যুলেট ভবনে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে স্বীকার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে এ হত্যার সঙ্গে যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।

জিএস/