প্রেস ব্রিফিংএ মুখপাত্র নেড প্রাইস

নিউইয়র্কে বেনজীরের পাবলিক মিটিংএ যোগদানে জ্ঞাত নয় স্টেট ডিপার্টমেন্ট

নিউইয়র্কে বেনজীরের পাবলিক মিটিংএ যোগদানে জ্ঞাত নয় স্টেট ডিপার্টমেন্ট

স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা

বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদের জাতিসংঘে পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে যোগদানের বাইরে পাবলিক মিটিংএ অংশ নেয়ায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বেনজীরের পাবলিক মিটিংএ যোগদানের বিষয়ে অবহিত নন বলে জানান মুখপাত্র নেড প্রাইস।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক প্রেস ব্রিফিংএ সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান - জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে যোগ দিতে লেবারডে ছুটি চলাকালীন নিউইয়র্ক সফর করেছেন বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত র‍্যাবের প্রাক্তন মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান মিঃ বেনজীর আহমেদ। তিনি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের দ্বারা আয়োজিত একটি জনসভায় যোগ দিয়ে অধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের জবাব দিতে বলেছেন এবং তিনি দাবি করেছেন ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আদায় করা হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। আমি অবাক হচ্ছি যে, তিনি কীভাবে জাতিসংঘের সম্মেলনের নামে নিউইয়র্কের কুইন্সে একটি জনসভায় যোগ দিতে পারেন? কারণ আমরা জানতে পেরেছি যে তাকে এখানে কেবল জাতিসংঘের সভায় যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল? এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, তার ( বেনজীর আহমেদের) এধরনের পাবলিক মিটিংয়ের যোগদানের বিষয়ে আমি তাৎক্ষনিকভাবে অবগত নই। তবে আপনার প্রশ্ন থেকে জানতে পারলাম ওখানে একটি পাবলিক মিটিংএ তিনি যোগ দিয়েছেন। যোগদানের কারণ এবং কোন ধরনের ক্ষমতাবলে তিনি ওই পাবলিক মিটিংএ যোগদান করে থাকতে পারেন তার বিস্তারিত আমার জানা নেই।

প্রসঙ্গত, শর্তসাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেয়া হলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নাম লেখানো বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। শুধু জাতিসংঘ পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে অংশ নেবার সুযোগ দিলেও গত ২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগে সমর্থকদের সভায় অংশ নিয়ে দলীয় নেতার মতো বক্তব্য দেন বেনজীর।হুমকির সুরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন নিজ দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে তিনি ছিলেন সমালোচনা মুখর।

সংবর্ধনার নাম দিয়ে করা হলেও এটি ছিলো মূলত আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশ। এতে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা হিন্দাল কাদির বাপ্পা। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

বেনজীর কটাক্ষ করেন বাংলাদেশের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের। তিনি বলেন, “বাট- ঐ যে অধিকার, প্রাধিকার, গতি কার, আমি কার, তুমি কার..সংস্থা আছেনা আমাদের দেশে।”

যুক্তরাষ্ট্রর মিডিয়া পুরোপুরি স্বাধীনভাব কাজ করার সুযোগ পায়না উল্লেখ করে বেনজীর বলেন, “এই দেশেও- বলা হয়ে থাকে মার্কিন মুল্লুক। মিডিয়া সবের্াচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করে। কিন্তু এখানেও এমন কিছু আছে আমি জানি। একজন প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে টাইম পত্রিকায় (নিউইয়র্ক টাইমস) একটা নিউজ করার পরে- এটা হোয়াইট হাউস জেনে যায় বাজারে আসার আগেই। তখন টাইম কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা হয়েছিল সমস্ত কপি ডেস্ট্রয় করে নতুন প্রিন্ট করার জন্য।”

তিনি বলেন, “মার্কিন মুল্লুক সমস্ত বড় বড় টিভি হাউজগুলোর মালিক কে? কারা? সব ব্যবসায়ীরা। ব্লুমবার্গ, ফক্স নিউজের মালিক কে? এখন, সিএনএন এর মালিক কে? ফলে হয় কী ব্যাবসায়ীরা সবসময় তাদের ব্যবসার স্বার্থ রক্ষা করতে চায়। তারা এমন কোনো ঝুঁকি নিবেনা যাতে করে তার ব্যবসার ইন্টারেস্টের কোনো ক্ষতি হয়। ফলে মিডিয়ার যে স্বাধীনতা সেটা কিন্তু লিমিটলেস না।”

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে বেনজীর আহমেদ বলেন, “২০০৯ সালে আমি এই নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে চাকরিতে ছিলাম। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, যে ৬০০ লোককে গুমের অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের কোনো তালিকা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি।এটা করেছে তারাই, যারা সত্তর সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দেয়নি, যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। ওই গোষ্ঠী বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চারটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। সেই ভাড়াটে ফার্ম টানা তিন বছর চেষ্টা করেছে কথিত স্যাংশনের জন্য।”

তিনি বলেন, “২২ জন তথ্য-সন্ত্রাসী রয়েছেন। এদের জবাব দিতে হবে। আপনি যে মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন, সেই বিশ্বাসে যদি চ্যাম্পিয়ন হোন, তাহলে আপনাকেই সেটি পালন করতে হবে।”

উল্লেখ্য, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীরসহ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট।