ওয়েন্ডি শারম্যানের ফোন: বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগাদা, রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দেবার আহবান

ওয়েন্ডি শারম্যানের ফোন: বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগাদা, রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা দেবার আহবান

স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের  তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একিসঙ্গে ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ দূতাবাসের সকল কর্মকতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে দেশটি।

সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এক যুগ ধরে গুম হওয়া ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যাবার সময় সরকার দলীয় সমর্থকদের বাধা এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে তৈরি হওয়া উদ্বেগ, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ফোনালাপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শারম্যান।

বাংলাদেশের তরফ থেকে দ্বিপাক্ষিক তরফে আলোচনার কথা বলা হলেও এ ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং তাদের রাষ্ট্রদূত ইস্যুতে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। শাহরিয়ারের সঙ্গে  ওয়েন্ডি শারম্যান ফোনালাপ প্রসঙ্গে মুখপাত্র নেড প্রাইস কর্তৃক  জাস্ট নিউজে পাঠানো বিবৃতির শুরুতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে গুরুত্ব দেবার কথা বলা হয়েছে। তারপরই রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সর্বস্তরের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহবান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার শাহীনবাগে একটি বাড়িতে গুমের শিকার স্বজনদের সংগঠন 'মায়ের ডাক' সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যান। সে সময় সরকার দলীয় সমর্থকরা এবং তাদের মদদপুষ্ট 'মায়ের কান্না' নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা রাষ্ট্রদূতের অবস্থান করা বাড়ির প্রবেশদ্বারে তাকে ঘিরে ধরে একটি স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন। তাদের এই অনাহুত কর্মসূচীর কারণে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পূর্ব-নির্ধারিত মায়ের ডাকের অনুষ্ঠান শেষ না করেই রাষ্ট্রদূত শাহীনবাগ ত্যাগ করেন। কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তেও তাকে ঘিরে ধরে অবস্থানকারীরা। তার গাড়ির গতিও রোধ করেন তারা। বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে বেরিয়ে রাষ্ট্রদূত হাস সোজা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ করতে সেগুনবাগিচায় যান। সেখানে তিনি তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান।

এঘটনার পরদিন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে ডেকে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ঢাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে উষ্মা প্রকাশ এবং তার নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানান।

পিটার হাসের নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি  নিয়ে কড়া বার্তা দেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)’র স্ট্র্যাটিজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যামিরাল জন কিরবি। এ ঘটনায়  তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

বিশেষ ব্রিফ্রিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কোনোরকম রাখ-ঢাক না করেই কিরবি বলেন, বাংলাদেশের যেসব বিষয়গুলোতে মানবাধিকারের উন্নতি হচ্ছেনা নিশ্চিতভাবে সেগুলো নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রীর ফোনালাপের পর ঢাকার তরফ থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মূল ইস্যু থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে একটি দায়সারা বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পারস্পরিক অগ্রাধিকারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী শারম্যান এবং প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

এমএন/