পাচার করা টাকায় আরব আমিরাতে তথ্যমন্ত্রীর বাড়ি কেনা নিয়ে রিপোর্ট: প্রবাসী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা

পাচার করা টাকায় আরব আমিরাতে তথ্যমন্ত্রীর বাড়ি কেনা নিয়ে রিপোর্ট: প্রবাসী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাড়ি কিনেছেন উল্লেখ করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বৃটেন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম লন্ডন বাংলা চ্যানেল। আর খবর প্রকাশ করার অপরাধে চ্যানেলটির সম্পাদক আব্দুর রব ভুট্টোর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় সরকারের সমালোচনা করে খবর প্রকাশ করার দায়ে ভুট্টোর ভাই আব্দুল মুক্তাদির মনুকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। 

সোমবার সারাবিশ্বে সাংবাদিকদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস তাদের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের চক বাজার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক আব্দুর রব ভুট্টোর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। ৪ জানুয়ারি লন্ডন বাংলা চ্যানেলে একটি রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদের মানহানি করা হয়েছে অভিযোগ এনে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মাসুদ রানা নামের এক ব্যবসায়ী। পুলিশ এ অভিযোগের ভিত্তিতে এজাহার দায়ের করেছে। এর একটি কপি যাচাই করে দেখেছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস।

লন্ডন বাংলা চ্যানেলের রিপোর্টে সাংবাদিক আব্দুর রব ভুট্টো অভিযোগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ টাকা পাচার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাড়ি কিনেছেন।

মামলাটি নিয়ে আদালতে কোনো শুনানি হয়েছে কীনা সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন ভুট্টো।মামলাটি নিয়ে আদালতে কোনো শুনানি হয়েছে কীনা সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন ভুট্টো।

এবিষয়টি নিয়ে মাসুদ রানা, হাছান মাহমুদ এবং চক বাজার থানার ওসি মনজুর কাদের মজুমদারের সঙ্গে ফোন কল এবং বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস কিন্তু কারো কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারি একটি জাতীয় দৈনিককে জানিয়েছেন মাসুদ রানাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে বলেননি মন্ত্রী।

এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাংবাদিক ভুট্টোর ভাই আব্দুল মুক্তাদির মনুকে গ্রেফতার করা হয়। ভুট্টো কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসকে জানিয়েছেন তার ধারণা সাংবাদিকতা করার কারণে প্রতিশোধ নিতে সরকার তার ভাইকে গ্রেফতার করেছে। এই গ্রেফতারের আগে ভুট্টো লেফট্যানেন্ট কর্ণেল হাসিনুর রহমানের দুটি সাক্ষাৎকার প্রচার করেন। হাসিনুর অভিযোগ করেন সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী তাকে ২০১১ এবং ২০১৮ সালে গোপনে বন্দি করে এবং এ বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়।

ভাইকে গ্রেফতারের পরই অপরিচিত ফোন নাম্বার থেকে কল এবং বার্তায় হুমকি পাচ্ছের ভুট্টো। তাকে রিপোর্ট করা বন্ধ করতে বলা হচ্ছে এবং হুমকি দেয়া হচ্ছে এই বলে যে কথা না শুনলে বাংলাদেশে আরও মামলার মুখোমুখি হতে হবে। বার্তা পাঠিয়ে হুমকির বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস।

মনুর বিরুদ্ধে করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ভূট্টোর সঙ্গে মিলে তিনি গুজব ছড়াচ্ছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন। এতে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালে মৌলভীবাজার শহরে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের সময়  পুলিশের ওপর হামলা করতে মনুকে নির্দেশ দিয়েছেন ভুট্টো।

সাংবাদিক ভুট্টো কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তার ভাই জড়িত নয়। সরকার চাই তার ভাইকে বেআইনীভাবে বেশী সময় জেলে আটকে রাখতে এবং সাংবাদিকতার কাজ করায় তাকে ভয় দেখানোই এটার উদ্দেশ্য।

ভুট্টো আরও অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে পুলিশ এনএসআই এবং গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরা তার পরিবারের সদস্যদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, এমনকি ঢাকায় ব্যবসায় যুক্ত তার ভাই আব্দুল হামিদের বাসায়ও যাচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সাংবাদিক ভুট্টোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ এবং তার কাজ নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র রায় নিয়াতি এবং এনএসআই মহাপরিচালক টিএম জোবায়েরের সঙ্গে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস এর পক্ষে থেকে ফোন কল এবং বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো উত্তরর দেননি।

প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সরকারের প্রতিশোধমূলক আচরণের আরও তথ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস এর কাছে রয়েছে। এবছরের মার্চ মাসে বৃটেন প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাইয়ের ওপর হামলা, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বৃটেন প্রবাসী সাংবাদিক শামসুল আলম লিটনের ভাইকে গ্রেফতার এবং ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক কণক সারোয়ারের বোনকে গ্রেফতারের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

এমএন/