বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হবে: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ফ্রান্সিস

বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হবে: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ফ্রান্সিস

মুশফিকুল ফজল আনসারী, জাতিসংঘ সংবাদদাতা

জাতিসংঘ বাংলাদেশে এমন একটি নির্বাচন চায় যেটি সবার কাছে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বীকৃতি পাবে।

বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্যাসিফিক আইল্যান্ডস ফোরাম ও কপ-২৮ সম্মেলন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সরকারের একতরফা নির্বাচন আয়োজনের তফসিল ঘোষণা, বিরোধী নেতাকর্মীদের জেলে আটক, হত্যাসহ নানানভাবে নির্যাতন করা এবং আন্তর্জাতিক  সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সমঝোতার আহবান প্রত্যাখান করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়। এ ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিসের অবস্থান কী এবং কোন পদক্ষেপ নিবেন কীনা জানতে চাইলে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ফ্রান্সিস বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে তা জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রকে মজবুত করতে সহায়তা করবে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি স্মরণ করিয়ে দেন যে, সুদৃঢ় গণতন্ত্রিক ভিত্তির উপর কেবল স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারাবাহিকতা নির্ভর করে।

ব্রিফিংয়ে ওয়াশিংটন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং ২০১৪ এবং ২০১৮ এর মতো আবারও একটি জালিয়াতির নির্বাচন আয়োজনে সরকারের তৎপরতার কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, জলবায়ু ইস্যুতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এই অঞ্চলের জলবায়ু দোষনের দুই বৃহত প্রতিবেশী রাষ্টের পাশেই বাংলাদেশের অবস্থান।শুধু জলবায়ু নয়, একইরকমভাবে দেশটির গণতন্ত্রও সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। আমি সুনির্দিষ্টভাবে যা জানতে চাচ্ছি-- জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ একটি সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশ যখন অন্ধকার পথে হাঁটা শুরু করেছে সেই প্রেক্ষাপটে সংস্থাটির সাধারণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে আপনি কী ধরনের পদক্ষেপের কথা ভাবছেন? আপনি হয়তো অবগত আছেন যে আগামী ৭ জানুয়ারি নিবার্চন অনুষ্ঠানের তফসিল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের সরকার। এ তফসিল ঘোষণার মধ্যেই দেশটির বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালানো হচ্ছে, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের জেলে পাঠানো হচ্ছে এবং অনেককে হত্যা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক  সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সমঝোতার যে আহবান জানিয়েছে, সেটিকে প্রত্যাখান করেছে সরকার। দেশে আরেকটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আপনি হয়তো অবগত আছেন যে, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন দুটিতে ভোট ডাকাতি হয়েছিলো। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষার ক্ষেত্রে আপনার মন্তব্য কী?"

জবাবে ফ্রান্সিস বাংলাদেশ ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রত্যাশার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন,"আমি আশা করবো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে; সেই ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানানোর গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশটির আসন্ন নির্বাচন যেনো অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়। নির্বাচন যেনো এমনভাবে আয়োজন করা হয় যাতে করে এটি সবার কাছে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এটি হবে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের পক্ষে সবচাইতে ভালো কাজ।"

তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করি নির্বাচন সুষ্ঠু হলে কেবল  জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্ষা এবং বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে  সম্ভাবনা রয়েছে তা শক্তিশালী করবে।"

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গণতন্ত্র জরুরী উল্লেখ করে ফ্রান্সিস বলেন, "বৃহৎ পরিসরে বলতে গেলে গণতন্ত্র হচ্ছে এমন একটি ভিত্তি যার উপর স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারাবাহিকতা নির্ভর করে। বাংলাদেশের উচিত স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যমাত্রাকে সমর্থন করা।"

প্রশ্নোত্তরের শেষে "আপনার গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হোক" বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম এই সভাপতি।

এমআর/