সাফল্য ও সংগ্রামে খালেদা জিয়ার ৩৪ বছর

সাফল্য ও সংগ্রামে  খালেদা জিয়ার ৩৪ বছর

ঢাকা, ১১ মে (জাস্ট নিউজ) : গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসার ৩৪ বছর পূর্ণ হলো বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। ১৯৮৪ সালের ১০ মে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপাসন নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকে দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন এ নেত্রী। বিএনপি চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন খালেদা জিয়া।

তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বর্তমানে তিনি পুরান ঢাকার কারাগারে বন্দি। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ছিল স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হারানোর বেদনা, আর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ৩৪ বছরে এসে নিজেই বন্দি হয়ে আছেন কারাগারে। কারাবন্দি এ নেত্রীর রাজনীতির ৩৪ বছর উদযাপনে শুক্রবার (১১ মে) নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতির ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ মে) বিকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে একটি বিশেষ দিন। এই দিনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসেন। তিনি রাজনীতিতে আসার পর থেকে দেশ এবং গণতন্ত্রের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য এ জাতির, সেই গণতন্ত্রের নেত্রী আজ কারাগারে বন্দি।

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান করে মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন।

চেয়ারপারসনের প্রচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৮৩ সালে সাত-দলীয় জোট গঠন করে জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম শুরু করে। এরশাদের স্বৈরশাসন অবসানের লক্ষ্যে পরিচালিত দীর্ঘ সংগ্রামে খালেদা জিয়া অবৈধ এরশাদ সরকারের সঙ্গে কোনও প্রকার আপোস করেননি। বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞামূলক আইনের দ্বারা তার স্বাধীন গতিবিধিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর আট বছরে সাত বার অন্তরীণ করা সত্ত্বেও জেনারেল এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত কারার আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া।

৩৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বহুবার সংকটের মুখে পড়েছেন খালেদা জিয়া। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর থেকে আদালতের আদেশে যেমন তার স্বামীর সময়ে পাওয়া বাড়ি হারাতে হয়েছে, তেমনি ছোট সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর লাশও তাকে দেখতে হয়েছে।

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে দেশের জনপ্রিয়তম নেত্রী তিনিই। নির্বাচন করে কখনোই নিজের আসনে হারতে হয়নি বিএনপির চেয়ারপারসনকে।

জানা যায়, দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বিগত দিনের সাফল্য তুলে ধরলেও আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ অনেকটাই অনিশ্চিত। বিএনপি গত তিন মাস ধরে তার মুক্তি দাবি করলেও, নির্বাচনে তিনি আদৌ অংশ নিতে পারবেন কিনা- এই প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রায় প্রতিদিনই বলে আসছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার প্রথম শর্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি। তাকে মুক্তি না দিলে এই দেশে কোনও নির্বাচন হতে পারে না।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হয়ে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরানা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী মঙ্গলবার আপিলবেঞ্চে তার জামিন শুনানির কথা রয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রচার বিভাগ থেকে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ব্যবসা উপলক্ষে জলপাইগুড়িতে বসবাস করতেন। তার আদি নিবাস ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজী থানায়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর জলপাইগুড়িতে চা ব্যবসা ছেড়ে তিনি দিনাজপুর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

দিনাজপুর মিশনারি স্কুলে খালেদা জিয়া প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে ১৯৬০ সালে দিনাজপুর বালিকা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ওই বছরই তৎকালীন ক্যাপ্টেন (পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমান সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

খালেদা জিয়ার দুই ছেলের মধ্যে বড় তারেক রহমান এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি লন্ডনে আছেন। আর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়া একটি হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। খালেদা জিয়া বর্তমানে নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

উল্লেখ্য, রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘দেশনেত্রীর রাজনীতি, সংগ্রাম ও সফলতা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার (১১ মে) বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সুত্র: বাংলাট্রিবিউন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯৩৮ঘ.)