খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে জাতীয় নির্বাচন হবে না: মির্জা আলমগীর

খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে জাতীয় নির্বাচন হবে না: মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ৯ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

সোমবার বিকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে মির্জা আলমগীর একথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলন ছাড়া এ সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই। সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করার ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের উদ্দেশ্য একটাই, বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করা। আমরা দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে আহ্বান জানাই, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। এই স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেব না। কারণ তিনি এদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। আজ তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। কারণ তিনি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের এখন একটাই ষড়যন্ত্র, সেটি হলো বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি ও ২০ দলকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করা। কিন্তু দেশের জনগণ সেটি কখনই হতে দেবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তারপর নির্বাচনের চিন্তা করতে হবে।

বিএনপির এই নীতি নির্ধারক আরো বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তাই রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজ আমরা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় নিয়ে এখানে প্রতীকী অনশনে অংশ নিয়েছি। পৃথিবীতে অনেক রাষ্ট্রনায়ককে কারাগারে যেতে হয়েছে এবং মুক্তি পেয়েছেন। আবার অনেকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু আমরা আজ অনশন করছি, যখন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি। আর আমরা এখানে বন্দি অবস্থায় অনশন করছি।

মির্জা আব্বাস আরো বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়া থাকবেন, এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তিনি তার সুচিকিৎসা তো পাবেন, সেটা তাকে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে এমন জায়গায় রাখা হয়েছে, যেখানে একটু পরপর বিদ্যুৎ চলে যায়। অথচ জেলে আমরা যারা ছিলাম, দেখেছি বিদ্যুৎ গেলে সাথে সাথে জেনারেটর চলে আসত। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে সেটা করা হচ্ছে না। এভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি। উচ্চ আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দিলেও নিম্ন আদালত, সরকারের নির্দেশে সেটি বাতিল করছে। বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় উচ্চ আদালত দ্রুত শুনানির নির্দেশ দিলে নিম্ন আদালত শুনানি করছে ঠিকই, কিন্তু জামিন বাতিল করছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য শেষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাকে ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার জয় হয়েছে। জেলে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার জয় হয়েছে। জেলে যাওয়ার আগে তিনি নেতা–কর্মীদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করার কথা বলে গেছেন। এটা শুরু। শেষ সময়ে হলেও সরকার আজকের এই কর্মসূচির অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে। বিএনপির জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

আজকের অনশনে ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের হাজার হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকে বিএনপির নেতা–কর্মীরা মহানগর নাট্যমঞ্চে জড়ো হতে থাকেন। পরে নেতা–কর্মীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জ্যেষ্ঠ নেতারা এবং অঙ্গসংগঠনের নেতারা কার্পেটের ওপর বসে অনশন করেন। দুপুরের পর থেকে অনশন স্থানের আশপাশে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ঢল নামে।

বিএনপির এর আগের অনশন কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছিল। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ওই অনশন কর্মসূচি থেকে বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করে সাদাপোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ। আজকের অনশন কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকলেও বিএনপির কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বাধা দেয়নি। এ ছাড়া কোনো ধরনের আটক কিংবা গ্রেপ্তারের খবরও পাওয়া যায়নি।

অনশন কর্মসূচিতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সংহতি প্রকাশ করেন। অনশনে ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার ও জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান খলিকুজ্জামান ও সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমদ সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।

এই প্রতীকী অনশনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, নিতাই রায় চৌধুরী ও বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, কবির মুরাদ, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯৫৯ঘ.)