তফসিলের আগে সংলাপ চায় বিএনপি

তফসিলের আগে সংলাপ চায় বিএনপি

ঢাকা, ১৮ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : একাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংলাপের উদ্যেগে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন যদি নির্বাচনে না হয়, তাহলে সেটা কোনো নির্বাচন নয়। সেই নির্বাচন হতে হলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।

“আমরা সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। অন্যান্য ন্যায্য দাবি মানতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করতে হবে। তারপরেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা। তারপরেই নির্বাচন।”

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে মহানগর উত্তর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। একই খেলা বার বার হয় না। কাজেই বলতে চাই, সম্মানজনক পথে ফিরে আসুন। সম্মাননজনকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পথ একটাই অবশিষ্ট আছে। সেটা হলো অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, রাজবন্দিদের মুক্তি দিন, যেসব শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রেখেছেন তাদের মুক্তি দিন।

সিলেট সিটি করপোরেশ নির্বাচনে স্থগিত হওয়া দুই কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার জানে যে, ওই দুটি কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী যদি ১৬১টা ভোট পায় তাহলেই জিতে যাবে। কাজেই ওখানে কারচুপির চেষ্টা করলো না। এর ফলে যেটা হলো আমাদের প্রার্থী ২ হাজারের বেশি ভোট পেলেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৫‘শ ভোটের মতো। অর্থাৎ চার ভাগের একভাগ। এটাই হলো বর্তমানে দেশের যেকোনও সুষ্ঠু নির্বাচনের হিসাব।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সারা দেশে ওরা (আওয়ামী লীগ) পাবে আমাদের চার ভাগের এক ভাগ ভোট। আর সেই ভয়েই তারা নির্বাচন এমনভাবে করতে চায় যেন তাদের জয় নিশ্চিত হয়। সরকার নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনকে অনুগত করে এবং আইনি অস্ত্রের বেআইনি প্রয়োগ করে বেআইনিভাবে আবারো ক্ষমতায় যাওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখছে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য নিয়ে ওবায়দুল কাদের-এর অভিযোগের জবাব দিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব তার এক বক্তব্যে স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। এই কথার অর্থ এই না যে, আবার একাত্তর সালের মতো লড়াই করে ওইরকম স্বাধীনতা আমাদের আনতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনীতির ভাষা বুঝতে হবে আপনাকে। এই স্বাধীনতার মানে হলো আপনার রাজনীতি করার স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের স্বাধীনতা, সুন্দর, সুস্থ ও নিরাপদে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। অর্থাৎ প্রকৃত স্বাধীনতা বলতে যা বুঝায়।’

২০০৭ সালে ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্য তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘উনি ওই সময়ে বলেছিলেন, বঙ্গভবনের অক্সিজেন বন্ধ করে দেবেন। অক্সিজেন বন্ধ হলে মানুষ বাঁচে? বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ছিলেন, সামরিক-বেসামরিক সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। এখন কি আমরা বলব যে, উনি তাদের হত্যার চেষ্টা করেছিলেন?’

তিনি বলেন, ‘আজকে আপনি (ওবায়দুল কাদের) যখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কোনও কথায় এত বেশি খোঁজাখুজি করতে চান তখন তো আপনার কথারও খোঁজাখুজি করা লাগে একটু। আপনি সেই সময়ে অক্সিজেন বন্ধ করে বঙ্গভবনে বসবাসরত এতোগুলো মানুষের জীবন বিনাশ করতে চেয়েছিলেন। এটা কি রাষ্ট্রদ্রোহিতার চেয়ে কম বড় অপরাধ? এতোগুলো মানুষের খুনের চেষ্টা কি অপরাধ নয়?’

ওবায়দুল কাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আমরা আপনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করছি না। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের অর্থ আপনাকে বুঝতে হবে। আপনারা ক্ষমতায় আছেন। আমি যা বলবো তার অর্থ বুঝতে চাইবেন না -এটাকে বাঁকিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আকারে নিয়ে আসার চেষ্টা কববেন- এটিতো হবে না, এটি তো হয় না।’

নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা অনুরোধ করবো, বেশি কথার মতো বেশি বেশি মিথ্যা বলার দরকার নাই। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের জন্যে স্বাধীন হয়েছিলো। বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে বাঁচবে, বৈষম্যহীন সমাজে বাস করবে, তাদের ওপর কেউ অত্যাচার-নিপীড়ন করবে না, তাদের স্বার্থরক্ষায় রাষ্ট্র পরিচালিত হবে- এসব শর্ত নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জীবন বাজি রেখে। দেশ স্বাধীন করেছিলো। কাজেই দেশের মানুষ স্বাধীনতা মানে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠাকেই বুঝে। আর যখন সেটা অনুপস্থিত থাকে তখন সেটাকে প্রকৃত স্বাধীনতা বলতে নারাজ হয়।

এসময় মহানগর উত্তরের সভাপতি জুলফিকার মতিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯১৫ঘ.)