পরাজয় ঠেকাতে আগাম মামলা দিচ্ছে সরকার: মির্জা আলমগীর

পরাজয় ঠেকাতে আগাম মামলা দিচ্ছে সরকার: মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের লজ্জাজনক পরাজয় ঠেকাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে আগাম মামলা দিয়ে রাখছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের সময় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করার জন্য প্রতিটি গ্রাম-ইউনিয়নে আগাম মামলা করা হয়েছে। সরকার কতটা কাপুরুষ হলে এই ব্যবস্থা নিতে পারে।

দ্রুত জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা আলমগীর।

শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকার গঠন ছাড়া নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে না। অবাধ নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি নিশ্চিত- তাই তারা একতরফা নির্বাচন করে যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে চায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মির্জা আলমগীর বলেন, সরকারের মিথ্যা মামলা, হামলায় সারা দেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে। এটা আসলে এখন নরক হয়ে গেছে। প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়নে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আগাম মামলা দিয়ে রাখা হচ্ছে। ঢাকার সব থানায়, ওয়ার্ডে আগাম মামলা দিয়ে রাখছে। নির্বাচন এলে এসব মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে। কী কাপুরুষ। কী কাওয়ার্ড।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রচণ্ড ভয়ে আছে। জনগণ তাদের সঙ্গে নেই দেখে তারা আগাম মামলা, আটক শুরু করেছে। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সমস্ত বিবেক, মনুষত্বকে বিসর্জন দিয়ে প্রতিটি ইউনিয়ন, থানাসহ ঢাকার ওয়ার্ডগুলোতেও মামলা দেওয়া শুরু করেছে।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের সব রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে। সরকারের লোকেরা বহু কথা বলছেন। কিছুদিন আগে তারা ছবক দিতেন, নির্বাচনের কথা বলতেন। এতো উন্নয়নের কথা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলেন, তাহলে ভয় কিসের? এতো ভয় না পেয়ে একটা নির্বাচন দিন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকার বিরোধী দলকে কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দিবে না। ফেসবুকে লিখলেও ৫৭ ধারা, কাগজেও লিখতে দিচ্ছে না। কিন্তু দেশের মানুষ সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে, কোনো কিছুতেই শেষ রক্ষা হবে না।

সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, নষ্ট করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে ঠুটো জগন্নাথে পরিণত করেছে। প্রধান বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এর পরও আপনাদের শেষ রক্ষা হবে না, জনগণ ছাড়বে না বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ যখন হবে, তখন নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন ভেঙে যোগ্য মানুষকে দিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে, নির্বাচনে সেনা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। কিন্তু কোনো কিছু পরিবর্তন না করে পুলিশ দিয়ে নেতা-কর্মীদের কারাগারে আটকে রেখে একা একা হেলিকপ্টারে করে ঘুরে বেরিয়ে ভোট নেওয়া, এটি দেশের মানুষ হতে দেবে না। মানুষ গ্রহণ করবে না।

ইদানীং ভারতের পত্রপত্রিকা ভিন্ন সুরে কথা বলছে দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন, যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয় আওয়ামী লীগের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটবে। এটাই বাস্তবতা।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, উন্নয়নের ফুলঝুরি ছড়ানো হচ্ছে, অন্ধকার আকাশে আতশবাজি করা হচ্ছে। এতে কাজ হবে না। আওয়ামী লীগ প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে। সামনের নির্বাচনে পরাজয় ঠেকাতে অন্যায়, অগণতান্ত্রিক সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বাস্তবতা ঠেকাতে আওয়ামী লীগ যা খুশি তাই করছে। টিকে থাকতে সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে।

কাজী জাফরকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন বিএনপির মহাসচিব। বলেন, কাজী জাফর আহমেদের মধ্যে নেতৃত্বের সব গুণাবলি ছিলো। রাজনীতির বাইরেও তিনি শ্রমিক নেতা হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন জায়গায় থাকলেও জনগণের কাছ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি। তিনি কিংবদন্তি নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতির বাঁকে বাঁকে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তিনি সামনে চলে আসতেন।

মির্জা আলমগীর বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে এরশাদ সরকারের প্রলোভনে সারা দিলেও কাজী জাফর আহমেদ এতে সারা দেননি। জাতীয় ক্ষেত্রে তাকে খুব প্রয়োজন ছিলো। তার অনুপস্থিতি আমরা অনুভব করি। শেষ বেলায় বলে গিয়েছেন আমাদের যে কখনো গণতন্ত্রের বিপক্ষে যাবে না।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ। এরমধ্যেও তিনি আন্দোলন না থামিয়ে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে বিজয়ী করার কথা বলছেন। কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে বাতিস্তা সরকার সাজা দেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ইতিহাস আমাকে ধারণ করবে, তোমরা আমাকে সাজা দিতে পারো। কাজী জাফর আহমেদকে ইতিহাস ধারণ করে আছে। বেগম খালেদা জিয়াকে ইতিহাস ধারণ করছে।

স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী। বক্তব্য দেন- মোস্তফা জামাল হায়দার, জাফর আহমেদের মেয়ে কাজী জয়া, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খন্দকার গোলাম মোর্তজা, ড. রেদওয়ান আহমেদ, আহসান হাবিব লিঙ্কন, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, খন্দকার লুৎফর রহমান, গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে তাসমিয়া প্রধান প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩১২ঘ.)