ঢাকা, ১১ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : তিন ছেলেকে নিয়ে দোহারে বসবাস করেন সাহিদা বেগম। স্বামী মিজানুর রহমান ফকিরাপুলে থেকে প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা করেন। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি খবর পান তার স্বামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বড় ছেলে সোহেবকে নিয়ে ছুটে আসেন ঢাকায়। থানায় স্বামীর দেখা না পেয়ে আজ মঙ্গলবার বিকালে আসেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে। স্বামীকে দেখার পর আদালতের বারান্দায় হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। স্বামীর এক দিন রিমান্ড হওয়ার আদেশ শোনার পর সাহিদা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, তার স্বামী কোনো রাজনীতি করে না। অথচ পুলিশ তার স্বামীকে রাস্তা থেকে ধরল। এখন বলছে, স্বামী নাকি তার স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী।
দোহারের মিজানুর রহমানকে রমনা থানার পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ তাকেসহ (মিজানুর) ১৭ জনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে রমনা থানা-পুলিশ। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তাদের প্রত্যেকের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্র বলছে, এছাড়া মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা থানার পৃথক ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার আরো ৩২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আর শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার ২২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনকে ৫ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত। আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
তিতুমীর কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শরীফুল ইসলাম। তাকে রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশ বলছে, শরীফুল ছাত্রদল কর্মী। তার আইনজীবী জয়নাল আবেদিন আদালতকে বলেছেন, রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তার পরীক্ষা চলছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার দিন রয়েছে। শরীফুলের পক্ষে আদালতে পরীক্ষার রুটিন জমা দেওয়া হয়েছে।
ভাটারা থানার মামলায় গ্রেপ্তার মাহবুবুর রহমানের আইনজীবী আবুল কাশেম আদালতকে বলেন, তার মক্কেল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। হয়রানি করার জন্য পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার সুমনের মা হাসিনা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, তার ছেলে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। অথচ রাস্তা থেকে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে আসল।
আসামিপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী জানান, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীর পাশাপাশি পুলিশ নিরীহ সাধারণ মানুষকেও গ্রেপ্তার করে আদালতে তুলেছে।
আজ আদালতে দেখা যায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দুপুরের দিকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতের হাজতখানায় আনে পুলিশ। যাদের রিমান্ড চাওয়া হয় তাদেরকে হাজতখানা থেকে আদালতে তোলা হয়। রিমান্ড শুনানি শেষে যখন ফের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনদের কেউ কেউ হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।
দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনেরা আদালত ও হাজতখানার সামনে ভিড় করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দলটির মানববন্ধন চলাকালে ও শেষে ধর কাপড় করে পুলিশ। সোমবার দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড়, পল্টন মোড়, সেগুনবাগিচা ও হাইকোর্ট মোড় থেকে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। গাজীপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে পুলিশ অতর্কিতে হামলা ও ‘গুলি’ চালিয়েছে।
মানববন্ধন ঘিরে পুলিশ কিছুটা কৌশলী পথ বেছে নেয়, যার কারণে গণমাধ্যমের কর্মী ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের আটকের বিষয়টি সেভাবে বুঝতে পারেননি।
মানববন্ধন চলার সময় সাদাপোশাকে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের হ্যাঁচকা টেনে ধরে নিয়ে যান। এ সময় কেউ কেউ পালাতে সক্ষম হন, আবার কোনো কোনো দলের সদস্যরা তাদের আটক সদস্যকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। মানববন্ধন ঘিরে ঢাকার পাঁচটি থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা প্রেসক্লাব এলাকায় অবস্থান নেন। মানববন্ধনস্থলের পাশে পুলিশের এপিসি, জলকামান ও প্রিজন ভ্যান রাখা ছিল। সূত্র: প্রথম আলো।
(জাস্ট নিউজ/একে/২২২৬ঘ.)