বানের পানিতে কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

বানের পানিতে কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

এই তো আর কয়েক দিন পরই সোনালি ধানের নতুন স্বপ্ন ধরা দিত কৃষকের কাছে। কিন্তু সবই কেড়ে নিয়েছে বানের পানি; সেই সঙ্গে ডুবেছে কৃষকের স্বপনও।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় একদিনের রেকর্ড টানা বৃষ্টিতে প্রায় ১০ হাজার কৃষক নিঃস্ব হয়েছেন। দুই দফা বন্যায় ফসল হারিয়ে কৃষক দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাই অনেক কৃষক ছুটছেন দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, উপজেলায় বন্যায় ক্ষতি হয়েছে এক হাজার হেক্টর ধানের ফসলি জমির। আর প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত।

আগামী দিনে কীভাবে চলবে সংসার, কীভাবে উঠবে ধান চাষের খরচ, সেই দুশ্চিন্তা তাড়া করছে কৃষকদের।

উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর নতুনপাড়া গ্রামের কৃষক নৃপেন্দ্র নাথ (৪৮) বলেন, তিন বিঘা জমিত ধান গারচুনং সউগ শ্যাষ। এবার মোর ঘরত এক ছটাক ধানো উঠবে না। কি যে খামো সেই চিন্তায় মোর মাথা ঘোরেছে।

উপজেলার ৫ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ বিরাণভূমি। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই বন্যার জমে থাকা পানিতে ফসলের ক্ষেত পচে গেছে। পানি একটু একটু করে নেমে যাচ্ছে আর কৃষকের মন ঠিক ততটাই কষ্টের সাগরে ডুবিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমন ক্ষেত নয় বেগুন, পটোল, করলা, লাউ, সিম, মূলাসহ বিভিন্ন ধরনের বর্ষাকালীন সবজি ক্ষেত।

আলমপুর ইউনিয়নের দোয়ালীপাড়া, কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর, রহিমাপুর, বিন্নাকুঁড়ি, ইকরচালি ইউনিয়নের জগদীসপুর, কাঁচনা, হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ি, জলুবর মাছুয়াপাড়া, খারুভাজসহ সব কটি ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর কমবেশি একই অবস্থা।

এ ছাড়া উপজেলার সব ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেত পানির নিচে আছে।

সবজি চাষি আমিনুর রহমান, সেরাজুল, আব্বাস উদ্দিনসহ কয়েকজন জানান, গত কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া বানের পানিতে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি ক্ষেত পানির নিচে রয়েছে। ক্ষেতের পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেতগুলো মরে যাচ্ছে।

হাড়িয়ারকুঠি ইউপি চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ বাবুল জানান, বন্যার পানি ধীরগতিতে নামার কারণে আমন ধান ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

একই কথা বলেছেন তারাগঞ্জ সদর কুর্শা ইউপি চেয়ারম্যান আফজালুল হক সরকার, সয়ারের ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম কিরণ, ইকরচালি ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক, আলমপুরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এনামুল হক এনা।

উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ ও সংরক্ষণ কর্মকর্তা বিশ্বনাথ সরকার বলেন, বন্যার পর থেকেই আমাদের ইউনিয়নের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করছেন। তবে এখনও পুরোপুরি তালিকা করা শেষ হয়নি।

এ ব্যাপরে বৃহস্পতিবার উপজেলার কৃষিবিদ উর্মি তাবাসসুম বলেন, আসলে এমন সময় বন্যাটি হয়েছে, যে সময় আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কৃষকদের পক্ষে সম্ভব নয়।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত চলমান রয়েছে, তাদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়া হবে।

এমজে/