‌‘চোয়ারাই দাঁত ফেলাই দিয়ুম’ আ’লীগ নেতাকে হুইপপুত্রের হুঙ্কার, অডিও ভাইরাল

‌‘চোয়ারাই দাঁত ফেলাই দিয়ুম’ আ’লীগ নেতাকে হুইপপুত্রের হুঙ্কার, অডিও ভাইরাল

দিদারুল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এবং নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক। সম্প্রতি তাকে প্রাণনাশের হুমকিসহ কুরুচিপূর্ণ কথা বলার অভিযোগ পাওয়া গেছে পটিয়ার সংসদ সদস্য ও হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষা চেয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি আবেদনও করেছেন এ ক্রীড়া সংগঠক।

দিদারুল আলম চৌধুরী অভিযোগে উল্লেখ করেন, তিনি আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সাল থেকে তাকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হলেও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রাখা হয়। সেই হিসেবে প্রিমিয়ার ব্যাংক জিইসি মোড় শাখায় ‘চট্টগ্রাম আবাহনী ফুটবল কমিটি’ নামে একটি যৌথ হিসাব খোলা হয়। হিসাবের স্বাক্ষরকারী হিসাবে ক্লাবের মহাসচিব শামসুল হক চৌধুরী, ম্যানেজার সাইফুদ্দিনের পাশাপাশি দিদারুল আলমের স্বাক্ষর নেয়ারও কথা সব ধরনের লেনদেনে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাকে অন্ধকারে রেখে ওই হিসাব থেকে টাকা-পয়সা লেনদেন করা হচ্ছিল। সেজন্য দিদারুল এ মাসে অ্যাকাউন্ট বন্ধের আবেদন করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সব ধরনের লেনদেন স্থগিত রাখে।

এরপর এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে শামসুল হকের ছেলে নাজমুল করিম শারুন গত ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে দিদারুলের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। কথা বলার এক পর্যায়ে বন্ধ হওয়া ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে তিনি চাপ দিতে থাকেন। সেটা না মানলে প্রবীণ এ ক্রীড়া সংগঠককে হুমকি-ধমকিসহ অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেন।

দিদারুল আলম ও শারুনের কথোপকথনের চুম্বক অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো-

শারুন: আর আঙ্কেল আপনি ওই চিঠিটা উইথড্র করে ফেলবেন। ওটা দরকার নাই।
দিদারুল: ওটা…ওটাটা ক্লাবের বিষয়। ওটা আমি তোমার আব্বার সঙ্গে বসে কথা বলবো…ওকে।

শারুন: ওইগুলা…ওইগুলা দরকার আছে শুধু শুধু?
দিদারুল: আশ্চর্য্য কথা এনা। আমার যে…

শারুন: ওইটা দিয়ে কিছু হবে যে না। এটা আপনার প্রতি আমাদের…
দিদারুল : না হইলে মনে করো আমার একটা আপত্তি থাকলে ভবিষ্যতে…

শারুন: ঠিক আছে আপনার আপত্তি আপনি রাখেন। আমরা এইরকম কতো আপত্তি দিতে পারি না বিভিন্ন জায়গায়…
দিদারুল: ঠিক আছে। তুমি রবিবারে আসনি।

শারুন: আপত্তি কি এখানে আপনি একা দিতে পারেন নাকি? আপত্তি তো আমরাও দিতে পারি।
দিদারুল: ক্লাবের ব্যাপারে তোমার আব্বার সঙ্গে বসে কথা বলবো।

শারুন: ক্লাবের ব্যাপারে কিসের কথা? ক্লাবের ব্যাপারে যা কথা হওয়ার হইছে আর কথা বলার দরকার নেই। আপনি আপনার ক্ষমতা দেখাইছেন তো, এখন আমাদেরটা আমরা দেখাবো।

দিদারুল: ক্ষমতা-টমতা কিচ্ছু না।…
শারুন: দেখাইছেন তো। আপনি ক্ষমতা দেখাচ্ছেন না?

দিদারুল: আমাদের সেইফের জন্য করতে হবে না?
শারুন: আমরা যদি ক্ষমতা দেখাই আপনি ১%ও টিকতে পারবেন?

দিদারুল: না না, আমি ১০০% টিকতে পারবো। আমি হইলাম শেখ মুজিবের আদর্শিক সন্তান।
শারুন: এগুলা…এগুলা আঙ্কেল…এইসব…এইসব…এইসব গালগোল অন্য জায়গায় কইরেন। আমার সঙ্গে কইরেন না। আমি সম্মান দিছি সম্মান নিয়ে থাইকেন।

দিদারুল: শোন আমি সাগরেদ নই। তোমার আব্বা তো জাতীয় পার্টি করে, এখন আওয়ামী লীগে আইসা…

শারুন: এগুলা শেখ হাসিনা বুঝবে। আপনার বোঝার দরকার নাই। রাখেন মিয়া ফালতু…

দিদারুল: আমরা তো শাহজাদা, সাগরেদ না।

শারুন: আমি আপনাকে সম্মান দিয়ে কথা বলছি গায়ে লাগতেছে না?

দিদারুল: আমি তোমাকে এইজন্যই ফোন দিই নাই। তুমি এক কাজ করো রবিবারে আইসা…

শারুন: রাস্তাঘাটে যখন প্যান্ট শার্ট খুইলা দিমু তখন বুঝবেন। বেয়াদবি তো এখনও দেখেন নাই। সম্মান করে কথা বলছি গায়ে লাগতেছে না?

দিদারুল: অ্যাঁ অ্যাঁ? তুমি রাস্তাঘাটে…

শারুন: আপনি উল্টাপাল্টা কথা বলতেছেন কিসের জন্য?

দিদারুল: উল্টাপাল্টা কী বললাম? আরে শোন তোমার বাবা বিএনপি-যুবদলে…এরপর জাতীয় পার্টি কইরা এখন…

শারুন: গালবাজি যেডে এডে গরিবি রাস্তাঘাটত চোয়ারাই গালর দাঁত বেয়াগ্গুন ফেলাই দিইয়ুম। বেয়াদব হডিয়ার! (গালবাজি যেখানে-সেখানে করবি রাস্তাঘাটে চড় মেরে মুখের দাঁত সবগুলো ফেলে দেবো। বেয়াদব কোথাকার!)

দিদারুল: এরপরে জাতীয় পার্টি গরি…
শারুন: এই মিয়া তোরে রাস্তাত ধরি পিডিব মাইনস্যে। বেয়াদব! তুই আঁরে ফোন কিল্লাই দিয়ছ দে? এই তুই আঁরে ফোন কিল্লাই দিয়ছ দে? তোরে আঁই ফোন দিতো হয়িলাম না? তুই আঁরে ফোন কিল্লাই দিয়ছ? (এই মিয়া তোকে রাস্তায় ধরে পেটাবে মানুষ। বেয়াদব! তুই আমাকে ফোন কেন দিয়েছিস? এই তুই আমাকে ফোন কেন দিয়েছিস? তোকে আমি ফোন দিতে বলেছিলাম? তুই আমাকে ফোন কেন দিয়েছিস?)

দিদারুল: আমি তো অর্জিনাল।
শারুন: তোরে আঁই ফোন দিতো হয়িলাম না? তুই আঁরে ফোন কিল্লাই দিয়ছ দে?
(তোকে আমি ফোন দিতে বলেছিলাম? তুই আমাকে ফোন কেন দিয়েছিস?)

দিদারুল: এই দেখ না তোমার বেসিক যেটা সেটা… তুমি উল্টাপাল্টা…. এটাই তো তোমাদের বেসিক…
শারুন: তুমি আমারে ফোন দিছ কেন? ফালতু কোথাকার। আমার বাপে যেটা করবে করুক না। আমার বাবা হুইপ। আর তুমি এসব গালবাজি করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেছো।

দিদারুল: রাস্তাঘাটে তুঁই প্যান্ট খুলিবি দে ব্যাডা! (রাস্তাঘাটে তুমি প্যান্ট খুলবে ব্যাটা!)
শারুন: আমি খুলবো না। মানুষজনে খুলবে যে।…

অডিওটি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সৌজন্যে...