সাইবার ক্রাইমে মিথিলার অভিযোগ

সাইবার ক্রাইমে মিথিলার অভিযোগ

নির্মাতা ইফতেখার ফাহমির সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করেছেন অভিনেত্রী রাফিয়াত রশীদ মিথিলা। গত মঙ্গলবার রাতে ই-মেইলের মাধ্যমে তিনি অভিযোগ করেন বলে জানান ইউনিটের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং বিভাগের এডিসি আ ফ ম কিবরিয়া। গত সোমবার সন্ধ্যা থেকেই ফেসবুকের বেশকিছু গ্রুপে তাদের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

এডিসি আ ফ ম কিবরিয়া বলেন, ‘অভিনেত্রী মিথিলার বেশকিছু ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। মিথিলাও মঙ্গলবার রাতে ই-মেইলের মাধ্যমে বেশকিছু ডকুমেন্টসহ অভিযোগ করেছেন। সেগুলো আমলে নিয়ে অপরাধী শনাক্তে কাজ চলছে।’ সুনির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ই-মেইলে বেশকিছু লিংক পাঠিয়ে মিথিলা বলেছেন যে, তিনি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পরে আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চেয়েছিলাম, সুনির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে কিনা? কিন্তু তিনি করেননি। এখন আমরা লিংকগুলোর মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তের চেষ্টা করছি।’

এ নিয়ে সাইবার ক্রাইম থেকে নির্মাতা ফাহমির সঙ্গে গতকাল বুধবার যোগাযোগ করা হয়। পরে তিনি মিন্টো রোড গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলেন। সাইবার ক্রাইমের কর্মকর্তাদের কাছে ফাহমি অভিযোগ করেন- হ্যাক করেই তাদের ওই ডকুমেন্টগুলো চুরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি মামলা করতে চান। আজ বৃহস্পতিবার মামলাটি হতে পারে বলে সাইবার ক্রাইম সূত্রে জানা গেছে।

গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে মিথিলা বলেছেন, কী ঘটেছে তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে আসিনি। বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে যা হয়েছে সেই সম্পর্কে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে চাই। এসব ছবির কিছু বাস্তব, কিছু মনগড়া। আমার সুনাম ক্ষুণœ করতে কিছু অপরাধী প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এগুলো অনলাইনে ছেড়ে দিয়েছে। পরে অবশ্য অভিনেত্রী মিথিলা তার স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলেন।

নির্মাতা ইফতেখার আহমেদ ফাহমির সঙ্গে মিথিলার প্রেম ছিল। তখন (২০১৭-১৮ সাল) তোলা কিছু ছবিই ফাঁস হয়েছে জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘তার (ফাহমি) ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক হয়েছিল। তখনই অপরাধীরা খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য এগুলো খুঁজে নিয়েছে। এখানে ‘ডেটিং’ শব্দটির ওপর জোর দিতে চাই, যার অর্থ আমরা একটি সম্পর্কে ছিলাম। সহজভাবে বললে দুটি মানুষ একে অপরের সঙ্গে জড়ালে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটায়, ছবি তোলে। প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা এগুলো ভাগ করে নেয়। তবে নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করতে না পারার দায় আমারই।’

ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মোটেও লজ্জিত নন মিথিলা। স্ট্যাটাসে তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘আমার লজ্জা লাগছে এই ভেবে- দেশের কিছু কুৎসিত লোক আমার ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইচ্ছামতো পোস্ট, শেয়ার ও ব্যবহারের সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। আমার খ্যাতি ও ভাবমূর্তিকে অসম্মান করে তারা সাবস্ক্রিপশন বাড়াচ্ছে ও নানা খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমার লজ্জা হয় সেসব মিডিয়ার জন্য, বিশেষ করে কয়েকটি নিউজপোর্টাল আমার অনুমতি ছাড়াই আমাকে উদ্ধৃত করে এ খবর প্রকাশ করেছে। অথচ আমি এ নিয়ে কখনই কথা বলিনি বা কোনো বক্তব্য দেইনি। ঘরে-বাইরে, ভার্চুয়াল জগৎসহ সর্বত্র যে কোনো জায়গায় নারীদের যৌন হেনস্তা করা হলে একইভাবে লজ্জিত ও ক্ষিপ্ত হই।’

নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে মিথিলা আরও লিখেছেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমার সম্মান ও মর্যাদা শুধু আমার আকার আর পোশাকের কিংবা ব্যক্তিগত ছবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। জীবনে কঠোর পরিশ্রম, সৃজনশীলতা ও শিক্ষার মাধ্যমে সব অর্জন করেছি। আমার অতীতের ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো চুরি করে কিছু অপরাধীর কুকর্মের কারণে এসব ভেঙে যাওয়ার মতো ঠুনকো নয়।’

সাইবার অপরাধ বিভাগে অভিযোগ জানানো হয়েছে উল্লেখ করে মিথিলা হুশিয়ার করেন, ‘যারা আমার মান-সম্মান নিয়ে খেলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সেই দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে ছাড়ব। শপথ করছি, নিজের জন্য এবং হ্যাকার ও সাইবার অপরাধীদের শিকার হওয়া সবার জন্য লড়ব।’

ব্যক্তি জীবনে মিথিলা গায়ক-অভিনেতা তাহসান খানের সঙ্গে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন। গত বছর তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। তাদের এক মেয়ে আছে।

এমজে/