শুভ জন্মদিন জেমস

শুভ জন্মদিন জেমস

দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘নগর বাউল’-এর কর্ণধার ও ভোকালিস্ট মাহফুজ আনাম। সবার কাছে যিনি ‘জেমস’ নামে পরিচিত।

কিংবদন্তি এই রকস্টার ভক্তদের কাছে ‘গুরু’ নামেও পরিচিত। বাংলা গানের বিশাল জায়গা জুড়ে দখল জেমসের। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উপমহাদেশের জনপ্রিয় তারকা এখন জেমস। তার সাফল্যের চূড়ায় অবস্থানের পথটা মোটেই সহজ ছিল না।

জেমসের সংগীত জীবনের শুরুটা ছিল কঠিন ও সংগ্রামের। এই গানের জন্যই বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল জেমসের। ঠাঁই হয়েছিল ১২ বাই ১২ স্কয়ার ফিটের বোর্ডিংয়ে।

১৯৬৪ সালে নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। সেই সূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবারের সঙ্গে থাকতে হয়েছে তার। ছেলেবেলা থেকেই গানের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে জেমসের। সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় হাতে তুলে নিয়েছিলেন গিটার।

গানের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ থাকায় জেমসের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। তাই গান করা নিয়ে প্রচন্ড আপত্তি তার বাবার ছিল। নাইনে পড়া অবস্থায় বাবা যখন বুঝলেন ছেলের আর পড়াশোনা সম্ভব নয়, তখন ঘর থেকে তাকে বের করে দেওয়া হলো জেমসকে। কিশোর বয়সে চরম বাস্তবতার মুখে জেমসের ঠাঁই হলো বোর্ডিংয়ে।

তখন পরিবারের সঙ্গে চট্টগ্রামের থাকতেন জেমস। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এই নগরের ১২ বাই ১২ স্কয়ার ফিটের আজিজ বোর্ডিংয়ে শুরু হলো জেমসের নতুন জীবন। নিজের ঘর গানের জন্য পর হয়েছে কিন্তু হার মানেননি জীবন সংগ্রামে। স্বপ্নের পথে জীবনের হালটা শক্ত করেই ধরেছিলেন তিনি।

বন্ধুদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড ‘ফিলিংস’। সেসময় সারাদিন গান তৈরিতে কেটে যেত তার। আর সন্ধ্যা গড়ালেই চলে যেতেন নগরীর নাইট ক্লাবে গান গাইতে। একসময় চট্টগ্রামের মায়া ছেড়ে নিজেদের সৃজনশীল মৌলিক গান করার জন্য ঢাকা চলে আসেন।

১৯৮৬ সালে ঢাকায় এসে প্রথম অ্যালবামের কাজ শুরু করেন জেমস। ১৯৮৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের সঙ্গে তার প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ হয়। এরপর ১৯৮৮ সালে আসে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘অনন্যা’ প্রকাশ হয়। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি জেমসের।

এরপর ১৯৯৩ সালে প্রকাম করেন ‘জেল থেকে বলছি’ অ্যালবাম। এই অ্যালবামের টাইটেল গানটি দেশজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। একে একে প্রকাশ হয় ‘নগর বাউল’ (১৯৯৬), ‘লেইস ফিতা লেইস’ (১৯৯৮), ‘দুষ্টু ছেলের দল’ (২০০১), ‘পালাবে কোথায়’ (১৯৯৫), ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’ (১৯৯৭), ‘ঠিক আছে বন্ধু’ (১৯৯৯), ‘আমি তোমাদেরই লোক’ (২০০৩), ‘জনতা এক্সপ্রেস’ (২০০৫), ‘তুফান’ (২০০৭) এবং ‘কাল যমুনা’ (২০০৮) অ্যালবাম।

১৯৯৬ সালে ফিলিংস ব্যান্ড থেকে ‘নগরবাউল’ প্রকাশের পর থেকে ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নগরবাউল রাখেন জেমস। এই নামে ব্যান্ড থেকে প্রকাশিত একমাত্র অ্যালবাম ‘দুষ্টু ছেলের দল’। এখনো পর্যন্ত ‘নগরবাউল’ নামেই গান পরিবেশন করছেন জেমস ও তার দলের সদস্যরা।

বাংলাদেশি সিনেমায় জেমসের গান বেশ জনপ্রিয়। দুইবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সিনেমায় তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘দশমাস দশদিন’, ‘আসবার কালে আসলাম একা’, ‘মীরাবাঈ’, ‘দেশা আসছে’, ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’, ‘পাগলা হাওয়ার তরে’, ‘এত কষ্ট কষ্ট লাগে কেন অন্তরে’ এবং ‘বিধাতা’।

শুধু দেশীয় প্লেব্যাক নয়, বলিউডেও রাজত্ব করেছেন এই রক তারকা। তার গাওয়া বলিউডের ‘ভিগি ভিগি’, ‘চাল চালে’, ‘আলবিদা’, ‘রিশতে’ এবং ‘বেবাসি’ গানগুলো এখনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়।

জেমসের গাওয়া অনান্য জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘তারায় তারায়’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘সুলতানা বিবিয়ানা’, ‘সুস্মিতার সবুজ ওড়না’, ‘হতেও পারে এই দেখা শেষ দেখা’, ‘কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী’, ‘দুস্টু ছেলের দল’, ‘দিদিমনি’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’, ‘তোর সব কিছুতে নয় ছয়’, ‘বাবা কত দিন দেখি না তোমায়’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া’, ‘লিখতে পারি না কোনো গান’, ‘এক নদী যমুনা’ ইত্যাদি।

তার সঙ্গীতের সঙ্গে দীর্ঘ পথ চলায় ভক্ত-শ্রোতাদের ভালোবাসা ও সাড়া জীবনের অনেক বড় অনুপ্রেরণা বলে জেমস মনে করেন। এ তারকার জন্মদিন শনিবার (২ অক্টোবর)। এদিন জীবনের ৫৭ বছরে পা রাখলেন তিনি। জন্মদিনে ভ্ক্তদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘যতোদিন তোমরা আছো, ততোদিন আমি আছি। ’