বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস আজ

সংবাদকর্মীদের সুরক্ষা দিন, রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব

সংবাদকর্মীদের সুরক্ষা দিন, রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস আজ (রবিবার)। প্রতি বছর ৩ মে সারা বিশ্বে নানান আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে দিবসটি। সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যে প্রতিকূলতা, শাসকগোষ্ঠীর দমন-নিপীড়ন মোকিবলা, আহত হওয়া, প্রাণ বিসর্জন দেয়া এগুলো এখনো অব্যাহত রয়েছে। কাগজে কলমে রাষ্ট্রপ্রধানরা গণমাধ্যম মুক্ত বলে খই ফোটালেও বাস্তবতা তার উল্টো পিঠ দেখায়। বাংলাদেশের দৃশ্যপট তার ব্যতিক্রম নয়।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) এর সর্বশেষ রিপোর্টে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের করুণ দশা ফুটে উঠেছে। "দেশটিতে রাজনীতি করা যত কঠিন হয়ে উঠেছে, সংবাদপত্রে স্বাধীনতার লঙ্ঘনও তত বেড়েছে।," এভাবেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মূল্যায়ন তোলে ধরা হয় রিপোর্টে। বিশ্বের ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫১। আর তার উন্নতি নয় বরং অবনতিই ঘটছে বছরের পর বছর।

রিপোর্টে বলা হয়, "ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও এর নেতৃত্ব ২০০৯ সাল থেকে যে কঠোর পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন, তার শিকার সাংবাদিকরা। ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন, ইচ্ছে হলেই ওয়েবসাইট বন্ধ, সরকারের সংবাদ সম্মেলনে দেশের দুই শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে অংশ নিতে না দেওয়া এর কিছু উদাহরণ।"

এতকিছুর পরও সাংবাদিকতা থেমে নেই। প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই অন্যান্য দেশের সংবাদকর্মীদের মতো লড়ে যাচ্ছেন এ দেশের কর্মীরা। লড়ছেন মুক্ত মত প্রকাশের স্বপক্ষে।

শান্তি, ন্যায় এবং মানবাধিকার রক্ষায় পৃথিবীর সকল সরকার প্রধানকে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা এবং গণমাধ্যম স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

দিবসটি উপলক্ষে দেয়া এক বার্তায় সংস্থাটির জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, "আমরা বিশেষভাবে স্মরণ করছি সেইসব গণমাধ্যম কর্মীদের যারা এ মুহূর্তে জীবন বাঁচানোর পক্ষে কাজ করতে স্বাস্থ্য বিষয়ক সাংবাদিকতা নিয়োজিত রয়েছেন।"

তিনি আরো বলেন, "পুরো বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাসের বিপক্ষে লড়ছে। আর এ লড়াইয়ে সাংবাদিকদের তথ্য মানুষের জীবন-মৃত্যুর মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।"

করোনা ভাইরাস নিয়ে সাংবাদিকরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে সে সুযোগ করে দেবার জন্য সরকার প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহবান জানিয়েছেন গুতেরেস।

সাংবাদিকরা তথ্য যাচাই-বাছাই করা, বিজ্ঞানসম্মত পন্থা, বিষয়ভিত্তিক সংবাদ আর বিশ্লেষণ--এগুলোর সমন্বয়ে করোনা পরিস্থিতিতে মোকাবেলায় একধরণের প্রতিষেধকের যোগান দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে 'ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে' অথবা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকগণ এ দিবসটি পালন করে আসছে।

সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার শপথ গ্রহণ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় এই দিবসটিতে।

দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সাংবাদিকরাও তাদের পেশাগত অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এই দিবসটি পালন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করবে।