সুপ্রিমকোর্টে ব্যর্থ হবেন ট্রাম্প

সুপ্রিমকোর্টে ব্যর্থ হবেন ট্রাম্প

ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি ও ভুয়া ভোটের অভিযোগ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আদালতে গেলে মামলা করা সহজ হবে। কিন্তু এ ধরনের মস্তিষ্কপ্রসূত অভিযোগ প্রমাণ করা বেশ কঠিন বলে মনে করছেন মার্কিন বিচারক ও আইন বিশেষজ্ঞরা।

তারা মনে করছেন, নির্বাচনকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করার ট্রাম্পের অপচেষ্টার ফাঁদে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্ট পা দেবেন না। ট্রাম্প চাচ্ছেন ফলাফল ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে চলে আসা নির্বাচনের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট হস্তক্ষেপ করুন।

কিন্তু পরিস্থিতি বলছে, সুপ্রিমকোর্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা না-ও হতে পারেন। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে ভিত্তিহীন ও বিতর্কিত নানা মন্তব্য করে ট্রাম্প বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি সংকটে ফেলেছেন। রয়টার্স, সিএনএন।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব ব্যালট ভোটের দিন বা তার আগে পৌঁছেছে সেগুলো গণনা বন্ধ করার জন্য ট্রাম্পের আবেদনের প্রতি আদালত সাড়া দেবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এছাড়া মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের রাজ্যগুলোতে সম্ভাব্য ফল বদলে দিতে আদালত হস্তক্ষেপ করবেন- এমন সম্ভাবনাও নেই বলে মত আইন বিশেষজ্ঞদের।

মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট জাজ টিমোথি স্যাভেজ বলেন, ‘আমি জানি না এবং বুঝতেও পারছি না ডাক ভোটের কারণে কীভাবে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি নিয়ে বাড়াবাড়ির কোনো কারণ দেখি না আমি। পৃথিবীর কোনো আদালতে এ ধরনের মামলা টেকার কথা নয়।’

অনেক রাজ্যে যখন বেশিরভাগ ভোট গণনা বাকি, তখন বুধবার সকালে হোয়াইট হাউসে হঠাৎ দেখা দিয়ে নিজের বিজয় দাবি করেন ট্রাম্প। এই জয়ের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এরই মধ্যে। নির্বাচনী প্রচারণার সময়জুড়ে ডাক ভোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ট্রাম্প।

তার বক্তব্য হচ্ছে- প্রমাণ ব্যতীত কীভাবে বলা যাবে যে এসব ভোট আসল। তার বক্তব্য ছিল ‘আমাদের জাতির সঙ্গে এটি হবে বড় ধরনের প্রতারণা। আমরা চাই যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগ হোক। আমরা সুপ্রিমকোর্টে যাব। আমরা চাইব সব ভোট গণনা বন্ধ হোক।’ যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের ভোটকে এমন জালিয়াতি ও প্রতারণাপূর্ণ বলা নজিরবিহীন।

নিজের ভুয়া ভোটের দাবির পক্ষে ট্রাম্প কোনো প্রমাণ দেননি এবং কোন ভিত্তিতে আদালতে যাবেন তাও বিস্তারিত বলেননি। ওই দিনই পরে দেরিতে আসা ডাক ভোট গ্রহণ সংক্রান্ত একটি আটকে থাকা রিটের শুনানিতে ট্রাম্পশিবির পরাজিত হয়।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্দিষ্ট ব্যালট, ভোটদান ও গণনা পদ্ধতি নিয়ে হয়তো অভিযোগ করা যাবে আদালতে। কিন্তু এমন অভিযোগ নিয়ে নির্বাচনের ফলে পরিবর্তন আনার মতো অবস্থা তৈরি হবে না।

ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক নেড ফোলেই বলেন, এবারের নির্বাচনে ২০০০ সালের মতো উপাদান দেখা যাচ্ছে না।

ওই সময় সুপ্রিমকোর্ট ডেমোক্র্যাট আল গোরের বিপক্ষে রায় দিয়ে পুনরায় ফ্লোরিডার ভোট গণনা বন্ধের আদেশ দেন এবং বুশকে জয়ী ঘোষণা করেন।

এদিকে নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি ও ভোট ডাকাতির মতো গুরুতর কিন্তু ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে ট্রাম্প বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা ও ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। একটি উদারহণ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। বুধবার সকালে আইভরি কোস্টের মার্কিন দূতাবাস একটি একটি বিবৃতি জারি করে।

এতে পশ্চিম আফ্রিকার নেতাদের বলা হয় ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি যাতে পূরণ করা হয়।’

এর কিছুক্ষণ পরই ট্রাম্পের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার মন্তব্য আসে। ফলে বিশ্বের অনেক দেশে হাস্যরসের তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র ‘বিস্ফোরণুন্মোখ ও সম্ভবত সংকটে’ বলে মন্তব্য করেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

এমজে/