আর্মেনিয়ার সময় ফুরিয়ে আসছে: আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট 

আর্মেনিয়ার সময় ফুরিয়ে আসছে: আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট 

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন, আজারবাইজানের সেনাবাহিনী নাগার্নো-কারাবাখের যুদ্ধে জয়ী হতে চলেছে। তিনি বলেন,‘এই যুদ্ধে আপসের সুযোগও ক্রমশ কমে আসছে।’

প্রায় দেড় মাস আগে বিরোধপূর্ণ এই অঞ্চলটি নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুটো দেশের মধ্যে এর আগেও সংঘর্ষ হয়েছে। সমঝোতার মাধ্যমে ছয় বছর ধরে চলা যুদ্ধ ১৯৯৪ সালে থেমে গেলেও তাদের মধ্যে কখনও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে এই এলাকাটি আজারবাইজানের অংশ বলে স্বীকৃত। কিন্তু আর্মেনিয়ার সরকারের সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয়রা সন্ত্রাসীরা এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকল পাশিনিয়ানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। এই সাক্ষাৎকারের পরেই তিনি ঘোষণা করেন যে তার দেশের সেনাবাহিনী নাগার্নো-কারাবাখের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শুশা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আর্মেনিয়ার সরকার বলছে- সেখানে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। এই শহরটি আর্মেনীয়দের কাছে শুশি নামে পরিচিত।

বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, নাগার্নো-কারাবাখের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি দখল করে নিলে সেটা হবে এই যুদ্ধে আজারবাইজানের জন্য বড় ধরনের বিজয়। নাগার্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপানাকার্টের কাছে পাহাড়ের ওপর গড়ে উঠেছে শুশা শহর। এর ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক যুক্ত হয়েছে আর্মেনিয়ার সঙ্গে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই শহরের দখল নিতে পারলে এখান থেকে রাজধানী স্টেপানাকার্টে হামলা চালানো আরো সহজ হবে।

আজারবাইজানের দাবি

এই শুশা শহর দখল করে নেয়ার ঘটনাকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছেন এলাকাটি স্বাধীন করা হিসেবে। তিনি বলেছেন,‘বিশ্বে এমন কোনো শক্তি নেই, যা আমাদের থামাতে পারবে।’

শুশা দখল করে নেয়ার দাবি জানানোর আগে প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ বলেন,‘আর্মেনিয়ার সময় ফুরিয়ে এসেছে।’

তিনি বলেন, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তারা পুনরায় এসব এলাকা ফিরে পাচ্ছেন, আর এ কারণে আপসের মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের সুযোগ কমে আসছে। প্রেসিডেন্ট আলিয়েভের এই ঘোষণার পরপরই আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর রাস্তায় লোকজন উল্লাস প্রকাশ করেন।

দুটো দেশের মধ্যে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে যুদ্ধ শুরু হলেও দেখা যাচ্ছে যে অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকে আজারবাইজান ধীরে ধীরে নাগার্নো-কারাবাখের দিকে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে।

আর্মেনিয়া কী বলছে

তবে শুশা শহর হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার খবর অস্বীকার করেছে আর্মেনিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আর্টস্রান হুভানিসায়ান ফেসবুকে লিখেছেন,‘শুশি শহরে যুদ্ধ এখনও চলছে। অপেক্ষা করুন এবং আমাদের বাহিনীর ওপর ‘বিশ্বাস’ রাখুন।’

আজারবাইজানের ঘোষণার আগে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শুসান স্টেপানিয়ান লিখেছেন, "শুষা শহরের আশেপাশে রাতভর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে।"

শুশা শহরের তাৎপর্য

শুশা শহরের সঙ্গে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এই দুটো দেশেরই সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার আগ পর্যন্ত এই শহরে আজারবাইজানিদের সংখ্যা ছিল বেশি। কিন্তু ওই যুদ্ধের সময় লাখ লাখ আজারবাইজানি শহরটি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়।

আর্মেনিয়ানদের জন্যও এটি ধর্মীয় কারণে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। হলি স্যাভিয়র গির্জা এই শহরে অবস্থিত, যা আর্মেনিয়ান অ্যাপস্টলিক চার্চের একটি প্রতীক। এর আগে আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল যে আজারবাইজান ওই গির্জাটির ওপর হামলা চালিয়েছে।

দুটো দেশই সাধারণ জনগণের ওপর আক্রমণ চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করছে। আবার তারাই একে অপরের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা চালানোর অভিযোগ করছে।

তুরস্কের প্রতিক্রিয়া

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট শুশা শহর দখল করে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান আজারবাইজানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আজারবাইজানের জনগণকে তিনি "আমার আজেরি ভাই" সম্বোধন করে বলেন,‘শুশায় যা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে অধিকৃত বাকি সব জায়গাও খুব শিগগিরই মুক্ত করা হবে।’

আজারবাইজান তুরস্কের মিত্র দেশ। এই যুদ্ধে তুর্কি প্রেসিডেন্ট আজারবাইজানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়ার কথা যুদ্ধের পরপরই ঘোষণা করেছেন। শনিবার প্রেসিডেন্ট এরদোগান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেন, আজারবাইজানের জমি থেকে আর্মেনিয়াকে সরে যেতে হবে এবং তাদেরকে আলোচনার টেবিলে বসার ব্যাপারে বোঝাতে হবে।

রাশিয়ার বক্তব্য

ক্রেমলিন থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে বলেছেন, তিনি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে এখনই যুদ্ধ থামিয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমঝোতার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।

আর্মেনিয়া রাশিয়ার মিত্র দেশ, কিন্তু আজারবাইজানের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মস্কো দু'টো দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিল। এ বিষয়ে ২৫শে অক্টোবর সমঝোতা হলেও এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র-বিরতির লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। সূত্র : বিবিসি