ক্যাপিটল হিলে হামলার পর ট্রাম্প-পেন্সের প্রথম সাক্ষাত

ক্যাপিটল হিলে হামলার পর ট্রাম্প-পেন্সের প্রথম সাক্ষাত

যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর উগ্র সমর্থকদের ক্যাপিটল হিল হামলার পর থেকে কথা বন্ধ ছিল প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে। অবশেষে এই নীরবতা ভেঙেছে। গত ৬ জানুয়ারি হওয়া ওই হামলার পর গতকাল সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের মধ্যে প্রথম কথা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের দাঙ্গার ঘটনার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের মধ্যে আলাপ বন্ধ ছিল। সোমবার এই নীরবতা ভেঙেছেন তাঁরা।

প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে আলোচনা বেশ ভালো হয়েছে। তাঁর গত চার বছরে প্রশাসনের বিভিন্ন কাজ ও অর্জন নিয়ে আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে আগামী সপ্তাহের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন। ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা আইন ভেঙেছে এবং ক্যাপিটল হিল হামলা করেছে, তারা কোনোভাবেই সাড়ে সাত কোটি মার্কিনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করেন না। একই সঙ্গে তাঁরা তাঁদের প্রশাসনের বাকি দিনগুলোও দেশের হয়ে কাজ করার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।’

ক্যাপিটল হিল হামলার পর গত সপ্তাহান্ত ট্রাম্প অনেকটাই নিভৃতে কাটিয়েছেন। এ সময় তাঁর উপদেষ্টারা হয় তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছেন, নয়তো তাঁর আশপাশে সহজে ভিড়েননি। শুধু তাই নয়, ক্যাম্প ডেভিডে পূর্ব নির্ধারিত সফরও বাতিল করেছেন তিনি। ট্রাম্প সময়টা কাটিয়েছেন নিজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ড্যান স্ক্যাভিনোর সঙ্গে শলাপরামর্শের মাধ্যমে। নিশ্চিতভাবেই তাঁর শেষ সপ্তাহটি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ঘটনাবহুল হতে যাচ্ছে।

গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে এক জটিল পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উসকানির অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। টুইটার প্রেসিডেন্ট খ্যাত ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্টের ওপর স্থায়ী স্থগিতাদেশ এসেছে। প্রশাসনের একের পর এক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তাঁকে অপসারণে কংগ্রেসে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু এই সবকিছু ছাপিয়ে বারবার সামনে এসেছে ট্রাম্প-পেন্স সম্পর্কের অবনমনের বিষয়টি।
বিজ্ঞাপন

নিজের মেয়াদের শুরু থেকেই ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে পাশে পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নানা বিতর্কিত কথা বা কাজের পর পরিস্থিতি সামাল দিয়ে প্রেসিডেন্টকে সুরক্ষা দিয়েছেন পেন্স। সেই পেন্স যখন সপরিবারে ক্যাপিটল হিলে অবস্থান করছেন, তখনই ট্রাম্প সমর্থকেরা সেখানে হামলা চালায়। কিন্তু এই হামলার রাশ টেনে ধরতে নিজের সমর্থকদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাতে বারবার অনুরোধ করা হলেও ট্রাম্প তা করেননি। অন্য আইনপ্রণেতাদের কথা ভাবা দূরে থাক, নিজের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টিও এমনকি বিবেচনায় নেননি ট্রাম্প। এই ঘটনার পর থেকেই যাবতীয় আলাপ বন্ধ ছিল দুজনের মধ্যে।

৬ জানুয়ারির ওই ঘটনার পর ক্ষমতা থেকে ট্রাম্পের অপসারণের লক্ষ্যে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর প্রয়োগ ঘটানোর দাবি জোরালো হলেও পেন্স তাতে সাড়া দেননি। অবশ্য তিনি এটি খারিজও করেননি। এই বিকল্পটি তিনি হাতে রেখে দিতে চেয়েছেন, যেন ২০ জানুয়ারির আগে আরও বাজে কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এটি কাজে লাগানো যায়।

৬ জানুয়ারির আগে ট্রাম্প ও পেন্সের মধ্যে সর্বশেষ আলাপটি ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। সে সময় ট্রাম্পের বারবার আহ্বানের বিপরীতে পেন্স জানিয়েছিলেন, তাঁর একার পক্ষে নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়া সম্ভব নয়। সেই এখতিয়ার তাঁর নেই বলেও জানিয়েছিলেন পেন্স। এই কথায় বেশ ক্ষুব্ধ হন ট্রাম্প। ৬ জানুয়ারির সমাবেশে পেন্সকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন। সরাসরি কোনো কিছু না বললেও আগের খবরের সঙ্গে ওই দিনের বক্তব্যকে মিলিয়ে ট্রাম্প সমর্থকেরা বার্তাটি ঠিকই বুঝে নিয়েছিলেন। তাঁরা পেন্সকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ঠাওরেছিলেন। ক্যাপিটল হিল হামলার সময় কিছু উগ্র ট্রাম্প সমর্থকেরা পেন্সকে খোঁজার বিষয়টি তাই বিশেষভাবে শঙ্কা তৈরি করেছিল। শুধু ওই দিনই নয়, এরপরও পেন্সের উপদেষ্টাসহ তাঁর কিছু কর্মকর্তাকে হুমকি দিয়ে ই-মেইল করা হয়েছে।

তবে ওই ই-মেইল নিয়ে পেন্সের কার্যালয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে সিএনএন।