রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন চীনের ‘কৌশলগত পদক্ষেপ’: শি জিনপিং

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন চীনের ‘কৌশলগত পদক্ষেপ’: শি জিনপিং

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে চীনের কৌশলগত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সোমবার মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন শি জিনপিং। বৈঠক শেষে এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে সামান্য ধারণা দিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বের ওপরে জোর দিয়েছেন শি জিনপিং। চীনের নিজের স্বার্থ এবং বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার বিষয়টি মাথায় রেখে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি চীনের জন্য কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন শি জিনপিং। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা তাস।

খবরে জানানো হয়, রাশিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে কৌশলগত সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী চীন। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে এই আগ্রহের কথা তুলে ধরেন চীনা প্রেসিডেন্ট। দুই নেতা নিজেদের মধ্যে আলোচনার সময় বিভিন্ন ইস্যুতে গভীর আলোচনা করেন। এছাড়া ইউক্রেনে চলমান সংকট সমাধানে শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথ তৈরির ওপরে জোর দেন শি জিনপিং। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন সংকট সমাধানে চীন গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চায়।

এর আগে গত সোমবার তিন দিনের সফরে মস্কোতে অবতরণ করেন শি জিনপিং।

 

গত ডিসেম্বর মাসে এক ভিডিও কনফারেন্সে শি’কে রাশিয়া সফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান পুতিন। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই এবারের সফরে গেলেন তিনি। এমন সময় শি জিনপিং মস্কো সফরে গিয়েছেন যখন ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার দূরত্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রাশিয়ার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চীনের ওপরেও চাপ দিচ্ছে পশ্চিমারা। তবে সেসব চাপ তোয়াক্কা না করে বন্ধু পুতিনের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন শি জিনপিং।

এদিকে চীনা গণমাধ্যমগুলোতে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে এই বৈঠকের খবর প্রচারিত হয়েছে। শিনহুয়াতে এই বৈঠককে চীন-রাশিয়া সম্পর্কের জন্য যুগান্তকারী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এতে দুই দেশের জনগণই ব্যাপক উপকৃত হবে। রাশিয়া-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন গালিমা কুলিকোভা বলেন, রাশিয়ার মানুষেরা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে এবং তার সফরকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। কুলিকোভা রাশিয়া-চীন কূটনীতি নিয়ে ৬৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি চীনের সর্বোচ্চ সম্মান ফ্রেন্ডশিপ মেডেল পেয়েছেন তিনি। কুলিকোভা বলেন, চীনা প্রেসিডেন্টের সফর দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা প্রমাণ করে এবং ভবিষ্যতে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে বড় ভূমিকা রাখবে এই পদক্ষেপ।

২০১৩ সালের মার্চ মাসে শি জিনপিং প্রথমবারের মতো চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাশিয়া সফর করেছিলেন। ১০ বছর পর তৃতীয়বারের মতো চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শি জিনপিং। তৃতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর প্রথম বিদেশ সফরে রাশিয়াকে বেছে নেন তিনি। গত ১০ বছরে মোট ৪০ বার সাক্ষাৎ করেছেন পুতিন ও শি জিনপিং। এই দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়েও দারুণ বন্ধুত্ব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের অধীনে রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। একসময় বেইজিংকে নিয়ে মস্কোর যে অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছিল সেখান থেকে দুই দেশ এখন একে অপরের পরম বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমারা যখন রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে সর্বশক্তি কাজে লাগাচ্ছে, তখন রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে চীন। শি জিনপিং-এর এই সফর তাই প্রতীকী দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।