সিরিয়ায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত বাংলাদেশসহ ৬২ দেশ

সিরিয়ায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত বাংলাদেশসহ ৬২ দেশ

সিরিয়ায় গুম বা নিখোঁজ হওয়া এক লাখ ৩০ হাজার মানুষের চূড়ান্ত পরিণতি কী হয়েছে তা জানতে একটি নিরপেক্ষ মেকানিজম বা বডি গঠন করবে জাতিসংঘ। এ বিষয়ক প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদে ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ। প্রস্তাবে বৃহস্পতিবার ভোটদানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতসহ ৬১টি দেশ বিরত থাকে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

সিরিয়ায় গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা জানতে চান তাদের আত্মীয় বা প্রিয়জন কোথায় আছেন? তাদের সহায়তা করার জন্য জাতিসংঘ একটি মেকানিজম তৈরি করার চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এর ফলে সিরিয়ার যুদ্ধে গুম হওয়া ওইসব ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে জানতে একটি নিরপেক্ষ বডি গঠন করবে জাতিসংঘ। পরিষদের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ৮৩-১১ ভোটে প্রস্তাব পাস হয়। প্রস্তাবের যারা বিরোধিতা করেছে তার মধ্যে অন্যতম সিরিয়া। তারা বলেছে- নতুন করে গঠন করা ওই মেকানিজমকে সহযোগিতা করবে না সিরিয়া।

রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা, কিউবা এবং ইরান ‘না’ সূচক ভোট দেয়। লুক্সেমবার্গের নেতৃত্বে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ১২ বছরের সিরিয়া যুদ্ধের পরও সেখানে যেসব মানুষ গুম হয়েছেন তাদের পরিণতি অথবা তারা কোথায় আছেন- এ বিষয়ে তাদের পরিবারের কাছে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়নি বললেই চলে।

প্রস্তাব পাস হওয়ার ফলে জাতিসংঘের অধীনে একটি নিরপেক্ষ ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনস্টিটিউশন অব মিসিং পারসন্স ইন দ্য সিরিয়ান আরব রিপাবলিক’ গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ভিকটিম, যারা বেঁচে আছেন তাদেরকে এবং গুম বা নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

অনুমোদিত প্রস্তাবের অধীনে ৮০ কর্মদিবসের মধ্যে একটি নতুন এই ‘ইনস্টিটিউটের’ শর্তাবলী উপস্থাপন করবেন। দ্রুততার সঙ্গে তা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেবেন এবং একে অপারেশনে ব্যবহার করবেন। প্রস্তাবে ১০০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রিপোর্ট দিতে অনুরোধ করা হয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁকে। 

প্রস্তাবটি ভোটে দেয়ার আগে সাধারণ পরিষদে জাতিসংঘে নিযুক্ত লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রদূত অলিভার মায়েস বলেন, প্রতিটি দিনই (সিরিয়ায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের) পরিবারগুলো, বিশেষ করে নারীরা প্রশাসনিক ও আইনি জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। তারা তাদের প্রিয়জনের সন্ধান অব্যাহত রেখেছেন। ফলে তাদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মানসিকভাবে ক্ষতের শিকার হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, গত আগস্টে একটি রিপোর্টে গুতেরাঁ সুপারিশ করেছিলেন যে, ওইসব নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিণতির বিষয়টি স্পষ্ট করতে একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা বিবেচনা করছে জাতিসংঘের সদস্যরা। এক্ষেত্রে তিনি বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান এ কাজ করছে তাদের মধ্যে পর্যান্ত সমন্বয় নেই উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিজনদের মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে রিপোর্ট করতে ছুটতে হয়। এক্ষেত্রে অলিভার মায়েস বলেন, নতুন যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হবে তা হবে ‘ওয়ানস্টপ শপ’। অর্থাৎ এক স্থানেই সমাধান পাওয়া যাবে। 

তবে রাজনীতিকীকরণ করে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করছেন জাতিসংঘে সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত বাসাম সাব্বাঘ। তিনি বলেন, এটা হলো তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। তিনি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ‘না’ ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তি বিষয়ক সমস্যার সমাধান করেছে সিরিয়া। আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিষয়ে সব অভিযোগের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সিরিয়ার আইন অনুযায়ী নিরপেক্ষ তদন্ত করা হয়েছে।

গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নতুন যে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে তাতে ভিকটিম, জীবিত যারা ফিরে এসেছেন তারা এবং গুমের শিকার পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্ব রাখা উচিত। এর কাজ হবে পক্ষপাতিত্বহীন, স্বচ্ছ এবং অকাট্য সূত্র ও তথ্য।