ফিলিস্তিনি শহরে ২০ বছরের মধ্যে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় হামলা

ফিলিস্তিনি শহরে ২০ বছরের মধ্যে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় হামলা

পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযান চালিয়েছে ইসরাইল। এতে অন্তত ৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে শতাধিক। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ কমপক্ষে ১০টি মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হয়েছে, নিজ নাগরিকদের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষার অধিকার আছে ইসরাইলের। এ খবর দিয়েছে সিএনএন।

খবরে জানানো হয়েছে, গত ২ জুলাই ভোর রাতে শুরু হয় ইসরাইলের এই অভিযান। গাজার বিষয়ে ইসরাইল যত কঠোর, পশ্চিম তীরের ক্ষেত্রে সাধারণত তেমনটা দেখা যায় না। তবে এবার জেনিনের এই অভিযান নতুন করে আতঙ্কিত করে তুলেছে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের। ইসরাইল দাবি করেছে, তারা শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের কমান্ড সেন্টার ধ্বংস করেছে। তাদের টার্গেট ছিল অস্ত্র ও বিস্ফোরক কারখানাগুলো।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এরইমধ্যে হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে ফিলিস্তিন। ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছে, তাদের এ অভিযান শেষ হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এটি কয়েক ঘণ্টা বা টানা কয়েক দিনও চলতে পারে। আকাশ থেকে হামলার পাশাপাশি সার্বক্ষনিক নজরদারিও চলছে সেখানে। এছাড়া ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর একটি গাড়িবহর জেনিন শরণার্থী শিবির ঘিরে রেখেছে।

অন্তত দেড় শতাধিক সাঁজোয়া যানে করে প্রায় দশ হাজার ইসরাইলি সেনা এই অভিযানে অংশ নেয়। ইসরাইলি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অংশ নেয় এই অভিযানে। দুই দশক আগের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর জেনিন শহরে এ ধরনের বড় অভিযানের ঘটনা আর ঘটেনি। আধা বর্গকিলোমিটারের কম আয়তনের এ শিবিরে ১৮ হাজারের মতো শরণার্থী বাস করে।

জেনিনের ডেপুটি গভর্নর কামাল আবু আল-রৌব জানিয়েছেন সোমবার ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে আনুমানিক তিন হাজার ফিলিস্তিনি জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়েছে। জেনিনের স্কুল ও অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রে বাস্তুচ্যুতদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ শিবিরটিকে ঘিরে পশ্চিম তীরে সহিংসতাও বাড়ছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে জেনিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়, ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত আট জনের নাম হচ্ছে- নুর আল-দিন হুসাম মারশউদ (১৬), মাজদি আররাভি (১৭), আলী হানি আল-গৌল (১৭), হুসাম মোহাম্মদ আবু থিবা (১৮), আওস হানি হনউন (১৯), সামীহ ফিরাস আবু আল-ওয়াফা (২০), আহমদ মোহাম্মদ আমের (২১) ও মোহাম্মদ মুহান্নাদ আল-শামি (২৩)। এদিনই জেনিনের বাইরে রামাল্লা শহরে আরও এক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। তার নাম মোহাম্মদ ইমাদ হাসানিন (২১)।

এদিকে ইসরাইলের এই অভিযানকে সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিজের দেশের মানুষকে হামাস, ফিলিস্তিন ইসলামিক ফোর্স ও অন্য জঙ্গি সংগঠনের হাত থেকে রক্ষা করার অধিকার ইসরাইলের রয়েছে। তবে এ ধরনের অপারেশনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্ক থাকা দরকার। সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করা উচিত।
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য কয়েকটি পশ্চিমা দেশ হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জেনিনের শরণার্থী শিবিরকে ঘিরে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে। গত মাসে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় এখানে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হন। জাতিসংঘের হিসাবে, এ বছর ইসরাইলি হামলায় মোট ১৪৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।